মালয়েশিয়ায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে তিনজন দেশে ফিরে এসেছেন বলে জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিললে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শুক্রবার (৪ জুলাই) রাতে গণমাধ্যমকে দেওয়া এক বিবৃতিতে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, “জঙ্গিবাদের অভিযোগে যারা মালয়েশিয়ায় আটক হয়েছেন এবং পরে দেশে ফিরবেন, সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যদি তাদের বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।”
এর আগে শুক্রবার কুয়ালালামপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার পুলিশপ্রধান খালিদ ইসমাইল জানান, ইসলামিক স্টেট (আইএস) সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৩৬ জন বাংলাদেশি শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে আইএসের মতাদর্শ ছড়ানো, তহবিল সংগ্রহ এবং সিরিয়া ও বাংলাদেশে অর্থ পাঠানোর সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেছে মালয়েশিয়ার পুলিশ।
খালিদ ইসমাইল আরও জানান, আটককৃতদের মধ্যে ৫ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য হিসেবে মামলা হয়েছে। ১৫ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাকি ১৬ জন এখনও পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
মালয়েশিয়ার পুলিশের দাবি, এই চক্রে ১০০ থেকে ১৫০ জনের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। যাদের সম্পৃক্ততার মাত্রা কম, তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। অন্যদিকে যারা গভীরভাবে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে দেশটির সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযানে চরমপন্থী মতাদর্শ ছড়ানো ও সদস্য সংগ্রহের অভিযোগে বেশ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপ নজরদারির আওতায় এসেছে।
এ প্রসঙ্গে ড. আসিফ নজরুল বলেন, “মালয়েশিয়া আমাদের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। সেখানে কয়েক লাখ বাংলাদেশি কাজ করছেন। কয়েকজনের এ ধরনের অভিযোগ আমাদের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। বিষয়টি দুই দেশের জন্যই উদ্বেগজনক।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। মালয়েশিয়ার উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। আমরা একসঙ্গে কাজ করব। মালয়েশিয়া বা বাংলাদেশের মাটিতে জঙ্গিবাদের কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে।”
কারখানা, কৃষি ও নির্মাণ খাতে শ্রমিকের চাহিদা পূরণে মালয়েশিয়া বিদেশি শ্রমশক্তির ওপর নির্ভর করে থাকে। এ খাতে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। প্রতিবছর হাজার হাজার বাংলাদেশি কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে কুয়ালালামপুরে আইএস-সংশ্লিষ্ট এক হামলার পর থেকে মালয়েশিয়ায় জঙ্গি দমনে ব্যাপক অভিযান শুরু হয়। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রেপ্তারের হার কিছুটা কমে এসেছে, তবে চরমপন্থী মতাদর্শ ছড়ানোর বিরুদ্ধে দেশটির নজরদারি এখনও কঠোর রয়েছে।
একুশে সংবাদ////র.ন