রাজধানীতে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন কামারের দোকানে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা। সেখানে রাত-দিন চলছে দা, বটি, ছুরি, চাপাতিসহ কোরবানির পশুর মাংস কাটার কাজের বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরির কাজ। তাদের এ ব্যস্ততা সময় থাকবে ঈদের দিন পর্যন্ত।
শুক্রবার (১৪ জুন) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, লোহা পেটানোর ‘টুং টাং’ শব্দে মুখর তারা। কোরবানিকে কেন্দ্র করে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লোহা পিটিয়ে কামাররা তৈরি করছেন দা, বঁটি, ছুরি ও চাপাতি। এসব জিনিস দুই ধরনের লোহার উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়। একটি স্প্রিং লোহা (পাকা লোহা) এবং আরেকটি কাঁচা লোহা। লোহা ও কয়লার দাম গত বছরের চেয়ে এবার বেড়েছে। তাই গত বছরের চেয়ে এসব জিনিসের দামও বেশি।

ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী দা, বঁটি, ছুরি ও চাপাতি তৈরিতে দম ফেলার ফুরসত নেই কামারদের। দেশীয় জাতের লোহার এসব জিনিসপত্র তৈরিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কামারেরা।
একজন কামার বলেন,
‘বর্তমানে খুব কম দামে রেডিমেড সরঞ্জাম কিনতে পাওয়া যায়। সবাই রেডিমেডগুলোই বেশি নিচ্ছে। অবশ্য কামারদের ওপর থেকে আস্থা হারায়নি গ্রাহকরা। পুরাতন সরঞ্জামকে শান দিতে কামারের দোকানে ভিড় করছেন তারা। অনেকেই বানিয়ে নিচ্ছেন নতুন ছুরি, চাপাতি।,

তেজগাঁও নাখালপাড়া থেকে কোরবানির মাংস কাটার জন্য লোহার সরঞ্জাম কিনতে এসেছেন মজিবুর রহমান। তিনি জানান,
‘প্রতিবছরই কোরবানির গরু কাটার জন্য পুরাতন ছুরির পাশাপাশি নতুন নতুন ছুরি, বটি, চাপাতি কিনে থাকি, এবারেও ছেলেকে নিয়ে এসেছি যাতে কোরবানির দিন এইসব সরঞ্জামের জন্য অন্য কারো কাছে হাত পাততে না হয়। যদিও গরু কাটার জন্য লোক রাখা হয়েছে, তারা মাংস কাটার জন্য সরঞ্জাম নিয়ে আসবে, তারপরেও চিন্তা করলাম নিজের কাছে কিছু যন্ত্রপাতি থাকলে ভালো হয়। তাই কাওরান বাজারে আসা।’
অপরের রাজধানীর পান্থপথ থেকে আসা রুহুল আমিন বলেন,
‘আমরা তিন ভাই মিলে একটা গরু কোরবানি দেই। আমরা অন্যের হাতে কোরবানির গরু কাটাই না। শুধু একজন মাওলানা দিয়ে জবাই করিয়ে আমরা তিন ভাই, বউ, ছেলে, মেয়েসহ সবাই একসাথে মাংসগুলোকে কাটাকাটি করি। এতে ভালই লাগে। ছেলে-মেয়েরাও স্বাচ্ছন্দে আমাদের সাথে কোরবানির মাংস কাটায় সহযোগিতা করে। এতে পরিবারের সবাই মিলে আনন্দ উপভোগ করি।’

রাজধানীর মহাখালী থেকে মাদ্রাসার ছাত্র রহমাতুল্লাহ তিনি এসেছেন মাদ্রাসার জন্য কোরবানির পশু জবাই করার বড় আকারের ছুরি কেনার জন্য। তিনি বলেন,
‘আমাদের মাদ্রাসায় আগেরও প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি চাকুর রয়েছে, তারপরেও আরো কিছু বড় আকারের চাকু দরকার। তাই এখানে এসেছি, কিন্তু গতবারের তুলনায় এবার যন্ত্রপাতির দাম চাচ্ছে দ্বিগুণ। তারপরেও কিছু করার নাই, যেহেতু প্রয়োজন সেহেতু নিতেই হবে।’
কারওরান বাজারের পুরাতন একজন দা, বটি, ছুরি-কাঁচি বিক্রেতা পরেশ কর্মকার বলেন,
‘অন্যান্য বছরের তুলনায় লোহার দাম বেশি হওয়ায় কোরবানি দেওয়া সরঞ্জামের দাম এবার কিছুটা বেশি। আমাদেরকে দোষ দিয়ে লাভ নাই, লোহা বেশি দামে কিনি, যার কারণে এগুলোর দাম কিছুটা বেশি।’

এবার আকার ভেদে পশু জবাই করা ছুরি ৮০০ থেকে হাজার টাকা এবং হাড় কোপানো চাপাতি, দা ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে এবং চামড়া ছাড়ানো চাকু ১৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

