ব্রিটিশ শাসনামলে ঐতিহাসিক টংক আন্দোলন ও হাজং বিদ্রোহের নেতা কুমুদিনী হাজং মারা গেছেন।
শনিবার দুপুরে নিজ বাড়ি নেত্রকোনার দুর্গাপুর সীমান্তে বহেরাতলীতে ৯২ বছর বয়সী কুমুদিনী হাজং মারা যান বলে জানিয়েছে কমিউনিস্ট নেতা মনিং সিংহের ছেলে দিবালোক সিংহ। তিনি ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে রেখে গেছেন।
প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা কমরেড মনি সিংহের নেতৃত্বে টংক আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেয় দুর্গাপুরের হাজং সম্প্রদায়। এরই অংশ হিসেবে কুমুদিনী হাজংয়ের স্বামী লংকেশ্বর হাজং অন্দোলনে জড়িত হন।
১৯৪৬ সালে ৩১ জানুয়ারি বহেরাতলী গ্রামে লংকেশ্বরের বাড়িতে হানা দেয় ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেল বাহিনীর সশস্ত্র সেনারা। এ সময় স্বামীর অবস্থান জানাতে না চাইলে কুমুদিনীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে নারী নেত্রী রাশিমনি হাজংয়ের নেতৃত্বে শতাধিক হাজং নারী-পুরুষ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
কুমুদিনীকে ছাড়িয়ে নিতে গেলে নৃশংসভাবে তাদের ওপর গুলি চালানো হয়। এতে রাশিমনি ও সুরেন্দ্র হাজংসহ বেশ কয়েকজন নিহত হন। পরে সেনারা কুমুদিনীকে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।
ওই ঘটনার পর সংজ্ঞাহীন কুমুদিনী হাজংকে গ্রামবাসীরা বহেরাতলীর অদূরে গভীর পাহাড় ঘেরা আড়াপাড়া অরণ্যে কমিউনিস্ট নেতা কমরেড মনি সিংহের গোপন আস্তানায় নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই ছিলেন কুমুদিনীর স্বামী ও ভাসুররা।
এ ঘটনায় সরকার হাজং অধ্যুষিত গ্রামগুলোর উপর অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি সরকার বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলাও দায়ের করে। মামলায় কমরেড মনি সিংহ, লংকেশ্বর হাজং তার তিন ভাই ও কুমুদিনী হাজংসহ অনেক হাজং আন্দোলনকারীকে আসামি করা হয়।
ওই সময় সুসং অঞ্চলের প্রায় সকল হাজং পরিবারকেই পুলিশের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে ফেরারি জীবন যাপন করতে হয়েছিলো।
কুমুদিনী হাজং পুলিশের অত্যাচার ও গ্রেপ্তার এড়াতে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার লক্ষ্মীকুড়া গ্রামে বলেশ্বর হাজং এর বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন। আন্দোলনের মুখে ১৯৫০ সালে বিলুপ্ত হয় টংক প্রথা।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ তথা নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ এবং শেরপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে টঙ্ক প্রথা চলে আসছিলো। টঙ্ক বলতে খাজনা বুঝানো হতো। কৃষকদেরকে উৎপাদিত শস্যের উপর এই টঙ্ক দিতে হতো। কিন্তু এর পরিমাণ ছিলো প্রচলিত খাজনার কয়েক গুনেরও বেশি। যা দরিদ্র কৃষকদের পক্ষে সম্ভব ছিলো না। এই প্রথার বিরুদ্ধে কমরেড মণি সিংহের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয়।
সমাজসেবায় অবদানের জন্য ২০১৯ সালে কুমুদিনী হাজংকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ দেয় বাংলা একাডেমি। এ ছাড়া তাকে অনন্যা শীর্ষদশ (২০০৩), আহমদ শরীফ স্মারক (২০০৫), কমরেড মণি সিংহ স্মৃতি পদক (২০০৭), সিধু-কানহু-ফুলমণি পদক (২০১০), জলসিঁড়ি (২০১৪) ও হাজং জাতীয় পুরস্কার (২০১৮) দেয়া হয়।
একুশে সংবাদ/বিএইচ



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

