শুরু হলো স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপরিচয় অর্জনের ডিসেম্বর। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এখন শুধু স্বাধীনতা নয়, দেশের উন্নয়ন-সমৃদ্ধিও বাঙালির গর্বের বিষয়। তবে গবেষকরা মনে করেন, তরুণ প্রজন্মের কাছে এখনও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের শিক্ষা পুরোপুরি পৌঁছেনি। প্রয়োজন আরও উদ্যোগ। শিক্ষাবিদরা বলছেন রাজনৈতিক বিভেদ দূর করে, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মাঝেই রয়েছে স্বাধীনতার আসল অর্জন।
ডিসেম্বরের এই লাল সূর্য যেনো একাত্তরে বাঙালির আত্মত্যাগের স্মারক। দখলদার পাকিস্তানের কাছ থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনার প্রতীক। ১৯৭১-এর ৭ মার্চ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের মাঝে, যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার শক্তি খুঁজে পায় বাঙালি।
২৫ মার্চ কালরাতের পর, পাকিস্তানি শোষণের, শেষের শুরু হয়। ভারতের বিভিন্ন স্থানে সামান্য প্রশিক্ষণ পুঁজি করে পাকিস্তানের নিয়মিত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামেন মুক্তিযোদ্ধারা। একের পর এক গেরিলা আক্রমণে কোণঠাসা হয় প্রতিপক্ষ। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রথম শত্রুমুক্ত হয় যশোর অঞ্চল। ১৬ ডিসেম্বর, যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করে পাকিস্তানিরা। রচিত হয় বাঙালির বিজয়গাঁথা।
মুক্তিযুদ্ধ গবেষকরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক নানা ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে, অধিকারের জন্য আত্মপ্রত্যয়ই, বাঙালিকে চূড়ান্ত বিজয়ের শক্তি জোগায়।
মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ও ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, ডিসেম্বরে পাকিস্তান ভারতে আকস্মিক হামলা করা তাদের অনেক ক্ষতি করতে চেয়েছিল কিন্তু তা সফল হতে পারেনি। দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল এই সংঘাতকে আন্তর্জাতিক সংঘাতে রুপান্তর করা যেন জাতিসংঘ এগিয়ে এসে হস্তক্ষেপ করে ও যুদ্ধবিরতি করে দেয় তাহলে পাকিস্তানের পতন আর হতো না। তারা তাদের শেষ রক্ষাটা করতে পারত । আন্তর্জাতিক রাজনীতি খুব বড় ভূমিকা পালন করেছে । মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথ আক্রমনেই শেষে চূড়ান্ত বিজয় আসে।
স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য অর্জনে, রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে, প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নজর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা।
শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের রাজনীতির পুরনো মডেল পরিত্যাগ করতে হবে। রাজনীতিকে পুরো তৃণমূলে নিতে হবে। তৃণমূলের সঙ্গে রাজনীতিবিদদের একটি বোঝাপড়া থাকতে হবে।
তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ পৌঁছাতে যথেষ্ট উদ্যোগ নেই বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ ও গবেষকরা। এজন্য তৃণমূলে সঠিক নেতৃত্ব গঠনেও জোর দিয়েছেন তারা।
একুশে সংবাদ/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :