সাভারের আশুলিয়ায় ছয়জন আন্দোলনকারীকে হত্যা ও মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আজ (বুধবার) ১১তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মামলায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ চলছে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
এর আগে, গত ৯ অক্টোবর মামলার ১৪তম সাক্ষী হিসেবে শহীদ ওমর ফারুকের বাবা চান মিয়া আদালতে জবানবন্দি দেন। তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ঘটে যাওয়া সেই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরেন। পরে তাকে জেরা করেন পলাতক আট আসামির পক্ষে স্টেট ডিফেন্স ও অন্যান্য আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
৮ অক্টোবর এএসআই মনিরুল ইসলাম জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। তার আগের দিন, ৭ অক্টোবর কনস্টেবল রাশেদুল ইসলাম আদালতে সেই দিনের ঘটনার পূর্ণ বিবরণ তুলে ধরেন।
মামলার সূচনা বক্তব্য গত ১৪ সেপ্টেম্বর উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, “২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয়জন আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার পর তাদের মরদেহ পুলিশের ভ্যানে তুলে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এমন নৃশংসতা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।”
এর আগে, গত ২১ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। সেদিন আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে উপস্থিত আটজনের কাছে অভিযোগপত্র পাঠ করা হয়।
মামলায় গ্রেপ্তার আট আসামির মধ্যে রয়েছেন—ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল ও কনস্টেবল মুকুল।
অন্যদিকে, সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ আটজন পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করার নির্দেশে গত ১৬ জুলাই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২।
মামলার অভিযোগপত্র প্রসিকিউশন দাখিল করে গত ২ জুলাই। এতে ৩১৩ পৃষ্ঠার নথি, ৬২ জন সাক্ষীর নাম, ১৬৮ পৃষ্ঠার দালিলিক প্রমাণ এবং দুটি পেনড্রাইভ যুক্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় পুলিশের গুলিতে ছয় তরুণ নিহত হন। পরে তাদের মরদেহ পুলিশের ভ্যানে তুলে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, তখনও একজন জীবিত ছিলেন, কিন্তু তাকে বাঁচানো হয়নি—বরং পেট্রোল ঢেলে জীবন্তই পুড়িয়ে মারা হয়। এই নির্মম ঘটনার পর ১১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়।
একুশে সংবাদ // র.ন