মাদক পাচারের অজুহাতে ভেনিজুয়েলাকে হুমকি দেওয়ার একই সময়ে হন্ডুরাসের মাদক পাচারকারী সাবেক প্রেসিডেন্টকে ক্ষমা করে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ডোনাল্ড ট্রাম্প একদিকে ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে তার সব হুমকিকে “মাদকবিরোধী লড়াই” এর অংশ হিসেবে দাবি করে সেটাকে ন্যায্যতা দিচ্ছেন, অন্যদিকে একজন অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত মাদক চোরাচালানকারীকে সম্পূর্ণ ক্ষমা করে দিয়েছেন।
পার্সটুডে`র রিপোর্ট অনুযায়ী, মাদক পাচারের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে বন্দি হন্ডুরাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট হুয়ান অরল্যান্ডো হার্নান্দেজকে ক্ষমা করে দিয়ে ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, তার নিজের পছন্দের প্রার্থী নাসরি আসফুরা নির্বাচনে না জিতলে হন্ডুরাসের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধ করে দেয়া হবে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ হন্ডুরাসের রাজনীতিতে অভূতপূর্ব হস্তক্ষেপ হিসেবে সমালোচিত হচ্ছে।
হার্নান্দেজকে গত বছর মাদক পাচারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ৪৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। অভিযোগ ছিল, তিনি হন্ডুরাসের রাষ্ট্রপ্রধান থাকা অবস্থায় অন্তত ৪০০ টন কোকেন যুক্তরাষ্ট্রে পাচারে সহায়তা করেছিলেন। ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হন্ডুরাসের সাধারণ নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের সমর্থিত ন্যাশনাল পার্টির প্রার্থী লিবারেল পার্টির প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে। হন্ডুরাসের নির্বাচনে ট্রাম্পের সরাসরি হস্তক্ষেপে গোটা বিশ্ব হতবাক!
মাদক নিয়ে দ্বিচারিতা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেখানে হন্ডুরাসি রাজনীতিবিদকে ক্ষমা করছেন, সেখানে ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে হুমকির অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন মাদককে। তিনি মাসের পর মাস ভেনেজুয়েলার চারপাশে বিপুল সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করে রেখেছেন এবং ভেনেজুয়েলার জাহাজ ও নৌকা লক্ষ্য করে হামলার নির্দেশ দিয়েছেন। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৩ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে।
ট্রাম্প দাবি করেন, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো মাদক চোরাচালানের মূল হোতা। যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলাকে মাদক চোরাচালানের জন্য অভিযোগ করলেও জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ দপ্তর (UNODC)-এর আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সর্বাধিক কোকেন উৎপাদনকারী দেশ হলো যথাক্রমে কলম্বিয়া, পেরু ও বলিভিয়া। আর মার্কিন তথ্য অনুযায়ী, মেক্সিকো ও কলম্বিয়ার মতো দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রে সর্বাধিক মাদক পাঠায় এবং ভেনেজুয়েলাকে “দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রানজিট রুট” হিসেবে ধরা হয়।
ভেনেজুয়েলার তেল সম্পদের ওপর চোখ পড়েছে ট্রাম্পের
যদিও ট্রাম্প তার সব আগ্রাসী পদক্ষেপকে “মাদকবিরোধী লড়াই”-এর অজুহাতে ন্যায্যত দিতে চাইছেন, কিন্তু আমেরিকারই অনেক রাজনীতিবিদ ও গণমাধ্যম মনে করে আসল কারণ হলো ভেনেজুয়েলার তেল সম্পদ। বিশ্বের বৃহত্তম প্রমাণিত তেল মজুদ ভেনেজুয়েলায় রয়েছে- ৩১০ বিলিয়ন ব্যারেলেরও বেশি- যা সৌদি আরব ও কানাডার চেয়ে বেশি। এই “কালো সোনা” ট্রাম্পকে এমনভাবে প্রলোভিত করেছে যে, তিনি এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চান: একদিকে আমেরিকা অঞ্চলে সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী অন্যতম প্রধান নেতা মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করা, অন্যদিকে তার পছন্দমতো সরকার বসিয়ে ভেনেজুয়েলার জ্বালানি তেল সহজে হাতিয়ে নেওয়া।
একুশে সংবাদ/এসআর



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

