ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নতুন করে চালানো বিমান ও স্থল হামলায় একদিনে অন্তত ৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে সাত নারী ও দুই শিশু রয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) আল জাজিরার প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হয়েছে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে। স্থানীয় আল-আহলি স্টেডিয়াম, যা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল, সেখানে অন্তত ১২ জন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, সাধারণ মানুষ পরিবারসহ সেখানে নিরাপত্তার আশায় ছিলেন।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যুদ্ধবিরতির আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করা হলেও ইসরায়েলি সেনারা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, এই অভিযানে গাজা সিটিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে এবং হাজারো মানুষ এলাকা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে। তবে ইসরায়েলি সেনাপ্রধান এয়াল জামির দাবি করেছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণ দিকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে জাতিসংঘের অনুসন্ধান কমিশনের মূল্যায়ন ভিন্ন। কমিশনের মতে, ইসরায়েলের উদ্দেশ্য আসলে গাজায় দীর্ঘস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং পশ্চিম তীরে ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করা।
গণহত্যার মতো পরিস্থিতি এখন গাজার প্রতিটি কোণে। গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৬৫ হাজার ৪১৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং অন্তত ১ লাখ ৬৭ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। এখনও বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে গাজা ইস্যুতে বিশ্বনেতাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বলেন, “যারা শিশু হত্যা করে মানুষকে ভয় দেখায়, তারা মানবতার যোগ্য নয়।” সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারআ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জানান, “এই যুদ্ধ এখনই থামাতে হবে।”
এদিকে নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ আইদে জানিয়েছেন, শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে নীরব কূটনৈতিক আলোচনা চলছে। জুলাইয়ে গৃহীত “নিউ ইয়র্ক ঘোষণা”র ভিত্তিতেই এ উদ্যোগ। মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফও আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২১ দফা শান্তি পরিকল্পনা বিশ্বনেতাদের হাতে পৌঁছে গেছে এবং শিগগিরই অগ্রগতির খবর আসতে পারে।
তবে আগের অভিজ্ঞতা অন্য রকম। শান্তি প্রচেষ্টা ভেস্তে দিতে একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। মার্চে তিনি একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল করে গাজায় ভয়াবহ হামলার নির্দেশ দেন। তার ফলে তীব্র খাদ্যসংকট ও দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
একুশে সংবাদ/এ.জে