বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে ও সাবধানতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতে ভারত সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন দেশটির কংগ্রেস নেতা, লোকসভা সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শশী থারুর। সোমবার তিনি দিল্লিতে একটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসবের আলোচনায় অংশ নিয়ে এই পরামর্শ দেন বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম পিটিআইয়ের বরাতে জানিয়েছে দ্য প্রিন্ট।
ভারতের প্রবীণ সাংবাদিক ও স্কলার কে ভি প্রসাদের লেখা ‘ইন্ডিয়ান পার্লামেন্ট: শেপিং ফরেন পলিসি’ বইয়ের প্রকাশ উপলক্ষে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ফরেইন করেসপন্ডেন্ট ক্লাব (এফসিসি)।
বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও ভবিষ্যত সরকারের সঙ্গে কাজ করার মানসিকতা রাখার পরামর্শ দিয়ে শশী থারুর বলেন, ‘আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসেবে, সব স্তরে বোঝানো উচিত যে, বাংলাদেশের মানুষের জন্য কল্যাণকর কিছু করাই আমাদের প্রতিশ্রুতি, ‘‘আমরা কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল বা একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায় সম্পর্কে আরও বেশি উদ্বিগ্ন’’– তা বোঝানোর পরিবর্তে এই ধারণাটিই দেওয়া উচিত।’
বর্তমানে বাংলাদেশে ক্ষমতায় রয়েছে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত একটি অন্তর্বর্তী সরকার। গত বছর ছাত্র জনতার বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে এই সরকার ক্ষমতায় আসে।
বিক্ষোভকারীরা রাজপথএবং সরকারি অফিসগুলোতে ব্যাপকভাবে জড়ো হলে শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান। এরপর থেকে তিনি সেখানেই বাস আছেন।
শেখ হাসিনাকে ভারত সরকারের দেওয়া আতিথেয়তা ও আশ্রয়ের বিষয়ে নিজের সমর্থন তুলে ধরেন শশী থারুর।
কংগ্রেসের সংসদ সদস্য ও বিদেশ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রধান শশী থারুর অধিবেশনে সভাপতি বক্তব্য দেন। এরপর বাংলাদেশ পরিস্থিতি থেকে শুরু করে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনুষ্ঠিতব্য আমরেকিা সফর ও দেশটির সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শশী থারুর বলেন, ‘আমি মনে করি বাংলাদেশে যা ঘটছে তা আমাদের ঠিক পাশের দরজায়; এমন সুস্পষ্ট কারণের জন্য আমাদের ঘনিষ্ঠভাবে ও সাবধানতার সঙ্গে নজর রাখতে হবে। সেখানে যা কিছু ঘটছে তার কিছু উল্লেখযোগ্যও থাকবে ... এবং এক ধরনের আমেরিকান ভাষা ব্যবহার করে ভারতকে দুর্বল অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে। (বাংলাদেশে) কোনও শত্রুভাবাপন্ন সরকার ক্ষমতায় আসলে আমরা খুব দুর্বল হয়ে যাব।’
শশী থারুর অবশ্য এ–ও বলেছেন যে, ‘(বাংলাদেশের) ‘‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রতিকূল হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে’’ এমনটা মনে করছেন না তিনি। তবে, একই সঙ্গে কিছু সতর্কতার বিষয় রয়েছে বলে মনে করছেন।
ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে স্পষ্টতই ক্রমবর্ধমান সান্নিধ্য বাড়ার বিষয়ক প্রতিবেদন সম্পর্কেও শশী থারুরকে জিজ্ঞেস করা হয়। জবাবে এই প্রবীণ কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশে, যেমন আমি বলেছিলাম যে এই উভয় দিকই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি এমনকি উল্লেখ করেছি যে, কোনও কিছু গুরুতরভাবে ভুল হয় কি না তা ভুলে যাবেন না ... যে বাংলাদেশ আমাদের জন্য সংবেদনশীল জায়গা হয়ে উঠতে পারে। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে আপনি সবচেয়ে বেশি দুর্বল, কারণ এটি আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই। যেহেতু এটি একটি বিদেশি দেশ, তাই আপনার প্রচুর ক্ষতি করা যেতে পারে, এটাই বোঝাতে চাইলাম।’
‘সুতরাং, আপনাকে মনোযোগী হতে হবে। আপনাকে সাবধান থাকতে হবে। আপনাকে সচেতন হতে হবে। আপনাকে সজাগ থাকতে হবে। এবং সত্যিই আপনাকে (বাংলাদেশে) ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।’ যোগ করেন লোকসভা সদস্য থারুর।
ভারতের বিদেশ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রধান শশী বলেন, ‘আপনি কোনও নির্দিষ্ট দেশকে শাসন করার জন্য বেছে নিতে পারবেন না। আপনাকে তাদের সঙ্গে কাজ করতে শিখতে হবে। এবং এটি আমাদের করতে হবে।’
তবে শশী থারুর স্বীকার করেছেন যে, ভারতে থাকা শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলো (বাংলাদেশের সঙ্গে) বিষয়গুলোকে ‘‘জটিল’’ করেছে।
আলোচনায় শশী থারুর বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তাঁর দেওয়া দুটি পুরনো ‘প্রধান মাপকাঠির’ কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘দুটি বিষয়ে আমি জোর দেব, আমাদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোয় হস্তক্ষেপ বোঝায়– এমন কিছু বা গোপনে কিছু করা উচিত নয় ...। দ্বিতীয়ত, যেভাবেই হোক বোঝাতে হবে ‘‘আমরা কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল বা একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের বিষয়ে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন নই’’। বরং আমাদের উচিত জনগণের আগ্রহ, জনগণের কল্যাণ, বাংলাদেশের কল্যাণকে গুরুত্ব দেওয়া।’
একুশে সংবাদ/ই.ট/এনএস
একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
