আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের অষ্টম আশ্চার্যখ্যাত ভারতের ‘তাজমহল’ যমুনায় বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত বছর মিসরে অনুষ্ঠিত কপ-২৭ জলবায়ু সম্মেলন থেকেই এই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন গবেষকরা।
টানা বর্ষণে সৃষ্ঠ বন্যায় গত সপ্তাহে আগ্রার তাজমহল চত্বরে ঢুকে পড়েছে যমুনার পানি। প্রায় ৪৫ বছর এমন ঘটনা ঘটল তাজমহলে। ঐতিহাসিক এ দৃশ্য কপ-২৭ সম্মেলনের সেই পূর্বাভাসেরই প্রতিফলন বলে মনে করছেন জলবায়ুবিদরা।
তারা বলছেন, আগামী এক দশক যেকোনো সময় যমুনার জলে হারিয়েও যেতে পারে ভবনটি।
তাজমহলে যমুনার পানি ঢুকে যাওয়ার পর দিলিভিত্তিক ব্যতিক্রমধর্মী নিউজ পোর্টাল দ্য নিউ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে মোগল সম্রাট শাহজাহানের পত্নীপ্রেমের এ নিদর্শটির ভবিষ্যৎ তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনে বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে আছে তাজমহল। বায়ুদূষণের চরম সংকটে পড়েছে স্মৃতিস্তম্ভটি। দিনে দিনে ফ্যাকাশে হচ্ছে দেওয়ালের রং। তারই সঙ্গে আবার মিলিত হয়েছে যমুনার দূষিত পানি। সব মিলিয়ে নিজের গায়ের রং ও হারাতে বসেছে ভবনটি।
এভাবেই নানা সমস্যার জালে জর্জরিত হয়ে বর্তমানে আধো ডুবে আছে বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্রটি। তবে বন্যার জলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় প্রত্নতাত্বিক জরিপ (এএসআই) সংস্থা।
তারা বলছে, ‘চারপাশ জল থইথই করলেও স্মৃতিস্তম্ভটি হুমকির মধ্যে নেই। কারণ, বেসমেন্টে এখনো পানি প্রবেশ করেনি।’
চলতি মৌসুমের রেকর্ড বৃষ্টিপাত উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ভয়াবহ বন্যা নিয়ে এসেছে। পানিতে ফেঁপে উঠেছে যমুনা নদীর জল। পানি পৌঁছে গেছে তাজমহলের সীমানায়ও। সাদা স্মৃতিস্তম্ভের দেওয়ালঘেঁষে পানি থইথই করছে। প্লাবিত হয়েছে ভবনটির পেছনের দিকের বাগানও।
বায়ুদূষণের শীর্ষ তালিকায় থাকা দেশটিতে ইতোমধ্যেই হুমকির মুখে পড়েছে তাজমহল। বাতাসে থাকা অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ ঠেলে দিচ্ছে বিপর্যয়ের মুখে। দেশটির বিষাক্ত বাতাস তাজমহলের সাদা মার্বেলকে বাদামি ও সবুজে রঙে পরিণত করেছে। বিষাক্ত বায়ুর সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে ভয়াবহ বন্যা।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা ইউসুইচ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বিশ্বের শীর্ষ পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে আগামী বছরগুলোতে জলবায়ুর প্রভাব কেমন হতে পারে তার ওপর একটি গবেষণা চালায়।
পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে-আগ্রা, অকল্যান্ড, বার্সেলোনা, বেইজিং, বার্লিন, দুবাই, এডিনবার্গ, গিজা, দক্ষিণ আফ্রিকা, লন্ডন, লস অ্যাঞ্জলস, মেক্সিকো সিটি, মস্কো, নিউইয়র্ক, প্যারিস, রিও ডি জেনিরো, সিডনি, টোকিও ও টরেন্টো। আগ্রা, আমস্টারডাম ও রিও ডি জেনিরোসহ বিশ্বের প্রধান স্থানে বন্যার ঝুঁকির পূর্বাভাস দেয়।
গবেষণাটি বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করতে না পারলে ভবিষ্যতে কী হতে পারে তার একটি ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে। ২১০০ সালে প্রতিটি দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
একুশে সংবাদ/স/এসএপি
আপনার মতামত লিখুন :