প্রায় ১০০ বছর আগে ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন যে ধারণা দিয়েছিলেন; সাম্প্রতিক নিখুঁত পরীক্ষানিরীক্ষার পর তার প্রমাণও মিলেছে। তবে আইনস্টাইনের কিছু ধারণা ভুলও হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন নতুন একদল গবেষক।
জ্যোতির্পদার্থবিদ্যার ধ্রুপদী তত্ত্ব বলে, ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরের চেহারা বলতে বোঝায় খাবারের সেই থালা, যার কানাটার নাম ‘ইভেন্ট হরাইজন’। সেই সীমানার মধ্যে একবার গিয়ে পড়লে আর রক্ষা নেই। তখন কেবলই পতন! অত্যন্ত জোরালো অভিকর্ষ বলের টানে আশপাশের গ্যাসের মেঘ, নক্ষত্রদের গিলে খায় কৃষ্ণগহ্বর। বেরিয়ে আসতে পারে না এমনকি আলোও। স্থান-কালও দুমড়ে মিলিয়ে যায় সেখানে!
আসলে ব্ল্যাক হোল হল মহাকাশের এমন একটি অঞ্চল যেখানে বিশাল পরিমাণ ভর একটি ক্ষুদ্র আয়তনে জড়ো থাকে। তার মহাকর্ষীয় টান থেকে আলোও পার পায় না। ব্ল্যাক হোলকে সরাসরি দেখা সম্ভব নয়। তবে ব্ল্যাক হোল যখন কোনও নক্ষত্রের সঙ্গী হয়, তখন সঙ্গী নক্ষত্র থেকে প্রবল আকর্ষণ টেনে নিতে থাকে টুকরো-টুকরো অংশ। সেই সব অংশগুলি প্রবল মাধ্যাকর্ষণের টানে বলয়াকারে ঘুরতে ঘুরতে তৈরি করে ‘অ্যাক্রিশন ডিস্ক’। সেই সব পদার্থনির্গত এক্স রশ্মি মহাকাশ দূরবীনে ধরা পড়ে এবং বিজ্ঞানীরা সেখান থেকেই ‘ব্ল্যাক হোলের’ আভাস পান।
অর্থাৎ, এমনি ব্ল্যাক হোল দেখা যায় না। যা দেখা যায়, তা হল চারপাশে থাকা গ্যাস আর প্লাজমা। তা দিয়ে তৈরি আলোর রিং। আর তার মাঝখানে থাকা কালো গাঢ় অংশ বা ছায়া। সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্বে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন জানিয়েছিলেন, এই ছায়া অংশের আকার-আয়তন দেখেই ব্ল্যাক হোলের আয়তন বোঝা সম্ভব। এ সমস্ত কিছুই নির্ভর করে অভিকর্ষ বলের উপর।
এতদিন পর তার এই মতামত নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ফ্র্যাঙ্কফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লুসিয়ানো রেজজোল্লা। একেবারে পৃথিবীর মাপের সুবিশাল টেলিস্কোপ (ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ) দিয়ে খচাখচ দু’টি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলা হয়েছে সম্প্রতি। ফ্র্যাঙ্কফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজজোল্লা এবং তার দল সেই ছবি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করেছেন। তার ভিত্তিতেই তাদের দাবি, আইনস্টাইনের অনুমান ভুল হলেও হতে পারে। এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার অ্যাস্ট্রোনমি’ জার্নালে।
গবেষক রেজজোল্লারা দুই ব্ল্যাক হোলের কয়েকটি ছবির ‘থ্রিডি সিমিউলেশন’ করিয়েছেন। তাতে যা ফল এসেছে, তা আইনস্টাইনের অনুমানের সঙ্গে এখন প্রায় মিলে গিয়েছে। ব্ল্যাক হোল অন্য বিজ্ঞানীরা যে তত্ত্ব প্রকাশ করেছেন, তার চেয়ে আইনস্টাইনের তত্ত্বই এগিয়ে। কিন্তু ভবিষ্যতে তা না-ও হতে পারে বলে মত রেজজোল্লার। তার দাবি, এখন ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ যে ছবি তোলে, তা দিয়ে পার্থক্য সহজে বোঝা যায় না। কিন্তু ভবিষ্যতে ছবি ‘রেজোলিউশন’ বাড়লে এই পার্থক্য আরও স্পষ্ট হবে। তুলনা করে বলা যাবে, কার তত্ত্ব সঠিক।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

