AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের খেলা


হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের খেলা

আধুনিক প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে আমাদের চারপাশের বিনোদনের মাধ্যম। আগের সেই প্রাণোচ্ছল খেলোধুলার ঘটেছে অপমৃত্যু। মোবাইল গেমসের কারণে এখন আর বিকেলে মাঠে দেখা যায় না কিশোর-কিশোরীদের। মোবাইল গেমস ও উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়ায় গ্রামীণ খেলাধুলার প্রতি আকৃষ্ট হারাচ্ছে অনেকেই। তাই বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলাগুলো।

 

এক বিংশ শতাব্দীর নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা গ্রামবাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য এসব গ্রামীণ খেলাধুলা তো করেই না, বরং অনেকের কাছে খেলাধুলা অচেনা ও অজানা। হা-ডু-ডু, দাড়িয়াবান্ধা, কাবাডি, গোল্লাছুট, কানামাছি, বউচি, পাইক্কা, লোকোচুরিসহ বিভিন্ন খেলা প্রচলিত ছিল। অথচ এক সময় এ সমস্ত খেলাধুলা গ্রামীণ বিনোদনের মাধ্যম ছিল। বর্তমানে এসব ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার প্রচলন না থাকায় গ্রামীণ জনপদ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে হাজার বছরের বাঙালী’র ঐতিহ্য।

 

ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায়  এসব গ্রামীন খেলা চোখে পড়তো পল্লী গাঁয়ের এ খেলা। কৃষকরা সারাদিন মাঠে কাজ করে ক্লান্তিবোধ করলেও সব বয়সের মানুষ খেলার মাঠে জড়ো হতো। করতালি আর শোরগোলে হাডুডু, কাবাডি, দাড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট খেলা শুরু করতো। ছেলে-বুড়ো সবার মন ছিলো খেলার জন্য উদগ্রীব।

গ্রামের শিশু-কিশোররা পড়াশোনার পাশাপাশি মেতে উঠতো বিভিন্ন ধরনের খেলায়। বিকেলে খোলা মাঠে দস্যিপনা চালাতো শিশু-কিশোররা। যুবক কিংবা শিশু- কিশোররা দলবেঁধে খেলত হা-ডু-ডু, দাড়িয়াবান্ধা, কাবাডি, ক্রিকেট, ফুটবল ও ভলিভল। শৈশবের দুরন্তপনা ও খেলাধুলায় মেতে থাকতো ছেলে-মেয়ের দল। বর্তমান আধুনিক প্রযুক্তি কেড়ে নিয়েছে অতীতের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলাকে। আর প্রজন্মকে ক্রমেই ঠেলে দিচ্ছে মোবাইলের দিকে। মোবাইলে নেশায় খেলাধুলার প্রতি অনাসক্তি কিশোর-যুবকদের ঠেলে দিচ্ছে ভয়ঙ্কর মাদকতার দিকে। শিশু-কিশোররা দলবেঁধে জড়ো হয়ে মোবাইল গেমসে সময় পার করছে।

 

এছাড়াও বর্তমানে শহরাঞ্চলে তো বটেই গ্রামাঞ্চলেও খোলা জায়গা বা খেলার মাঠের স্বল্পতার কারণে অনেক গ্রামীণ খেলার বন্ধের পথে। ফলে বর্তমানে ভিডিও গেম, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন ইত্যাদি গ্রামীণ খেলাধুলার সে স্থান দখল করে নিয়েছে। ফলে ছেলেমেয়েরা একটু সময় পেলেই মেতে ওঠে এসব যান্ত্রিক জিনিস নিয়ে।

 

পড়াশুনা যেমন ছেলেমেয়েদের মানসিক বিকাশ ঘটায়, তেমনি শারীরিক বিকাশ ঘটাতে খেলাধুলার কোনো বিকল্প নেই। আগেরকার দিনে গ্রামাঞ্চলে হা-ডু-ডু, কাবাডি, নৌকাবাইচ, কানামাছি, গোল্লাছুট, দাড়িয়াবান্দা, বলি খেলা ও লাঠিখেলা চলত। বিভিন্ন গ্রামে এসব খেলার জমজমাট আয়োজন হতো। এ সমস্ত খেলা দেখার জন্য অনেক দূরদূরান্ত থেকে মানুষ দলে দলে এসে উপস্থিত হতো মাঠে। অনেক খেলোয়াড় টাকার বিনিময়েও বিভিন্ন দলের হয়ে খেলতো। তাতে করে ভালো খেলায় টাকাসহ নানা রকম পুরস্কার যেমন মিলতো সেই সঙ্গে ভালো খেলোয়াড় হিসেবে সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়তো এলাকায়। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ এসমস্ত খেলোয়াড়দেরকে অনেক সম্মান করতো।

 

অতীতের সময়ে প্রতিবছর সব স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাগুলোতে নানা ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করা হতো। বর্তমানে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোনো খেলার মাঠও নেই। ফলে খেলাধুলা উপস্থিতি না থাকায় শিক্ষার্থীদের শারীরিক বিকাশ ঘটছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে হয়ত অচিরেই গ্রামীণ খেলাধুলা আমাদের সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাবে। পরিণত হবে রূপকথার গল্পে। এ সমস্ত গ্রামীণ খেলাধুলার সঙ্গে রয়েছে আমাদের পূর্বপুরুষদের নাড়ির সম্পর্ক। তাই তাদের স্মৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমাদের উচিত এ সমস্ত গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন করা। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এর পরিচিতি ও সুফল তুলে ধরতে হবে।

 

আশার বাণী হচ্ছে যে, এখন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কিছু উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে মাদকের ভয়াল গ্রাস থেকে প্রজন্মকে রক্ষা ও গ্রামীণ খেলাকে বাঁচাতে এদেশের সচেতন ব্যক্তিরাও এগিয়ে আসতে হবে, সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে করতে হবে। এরসঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ বৃদ্ধির মাধ্যমেই কেবল অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

 

একুশে সংবাদ.কম/স.চ/বিএস

Link copied!