ময়মনসিংহের ভালুকায় জাতীয়তাবাদী দল এবং প্রিয় নেতার প্রতি অনন্য ভালোবাসার এক নজির স্থাপন করেছেন উপজেলার পানিহাদি গ্রামের দিনমজুর আলাল সরকার।
অভাব-অনটনে জর্জরিত জীবনের মাঝেও নিজের সঞ্চয়ে লালন-পালন করা দুটি খাসি উৎসর্গ করতে যাচ্ছেন তিনি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক, ভালুকা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও আহ্বায়ক এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ফখরউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুর সম্মানে। এ যেন দলপ্রেম, ভক্তি ও মানবিকতার এক অপূর্ব সংমিশ্রণ যা বিরল, অনুপ্রেরণামূলক এবং ইতিহাসে স্থান পাওয়ার মতো।
দিনমজুর আলাল সরকারের জীবন সংগ্রামের গল্প যেন এক বেদনাময় বাস্তবের প্রতিচ্ছবি। তিনি পেশায় দিনমজুর, স্ত্রী অন্যের বাসায় কাজ করেন। অভাবের মাঝেই দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, দুই ছেলের একজন দিনমজুর ও অন্যজন রিকশাচালক। একটি জীর্ণশীর্ণ টিনের ঘরে পরিবার নিয়ে থাকেন তারা। গ্রামজুড়ে বিদ্যুৎ থাকলেও আলালের ঘরটি এখনো অন্ধকারে ডুবে থাকে যেন তাঁর জীবনের সংগ্রামেরই প্রতীক।
কিন্তু সেই অন্ধকার ঘরেই জ্বলছে দলের প্রতি অদম্য বিশ্বাসের আলো। যে আলো তাকে অন্য সবার থেকে আলাদা করেছে তাকে করেছে ‘বিশ্বাসে অটল’ এক সৈনিক। সম্প্রতি ফখরউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় দলীয় বহিষ্কারের খবরে আলাল সরকার গভীর শোক প্রকাশ করেন। তার ভাষায়, “বাচ্চু ভাই আমাদের আশা, আমাদের ভরসা। এমন একজন মানুষকে মিথ্যা মামলায় ফেলা মেনে নেওয়া যায় না।”
সেই কষ্ট থেকেই তিনি ঘোষণা দেন “বাচ্চু ভাইয়ের বহিষ্কার প্রত্যাহার হলে আর তিনি ধানের শীষের মনোনয়ন পেলে দুটি খাসি জবাই করে পুরো গ্রামকে খাওয়াব।” তার সেই ঘোষণা অনেকের কাছে আবেগের প্রকাশ কারও কাছে বিস্ময়। আর আলাল সরকারের কাছে এটি ছিল এক অঙ্গীকার, এক দায়বদ্ধতা।
যেন দৃঢ় বিশ্বাস থেকেই তার সেই কথা বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে। বাচ্চুর বহিষ্কার প্রত্যাহারের পর ধানের শীষের মনোনয়ন পাওয়া মাত্রই প্রস্তুতি শুরু করেন আলাল। পুরো ভালুকা উপজেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আলালের সেই ঘোষণা। মানুষের মুখে মুখে আলালের নাম তার দলপ্রেম, তার ত্যাগ, তার সততা। তার এই উদ্যোগ স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেকে বলছেন “লোকটা গরিব, কিন্তু মনটা অনেক বড়।”
দলকে ভালবেসে নিজের কষ্টার্জিত সঞ্চয় থেকে দুটি খাসি উৎসর্গ করা শুধুই আবেগ নয় এটি এক অনুভূতির বিপুল বিস্ফোরণ। একজন সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে দলের প্রতি এভাবে ভালোবাসা প্রকাশ বিরল, অনন্য এবং অনুকরণীয়।
দিনমজুর আলাল সরকারের এই উদ্যোগ হয়তো কোনো বড় মঞ্চের আলো পাবে না, কোনো বক্তৃতায় উচ্চারিত হবে না; কিন্তু মানুষের হৃদয়ে, ভালুকার মাটিতে এবং রাজনৈতিক ইতিহাসের পাতায় এটি নিঃসন্দেহে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে দলকে ভালবেসে নিজের সর্বস্ব উৎসর্গ করা এক সাধারণ মানুষের অসাধারণ গল্প।
একুশে সংবাদ//এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

