ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শুকানপুকুরী ইউনিয়নের পলাতক চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা আনিসুর রহমানকে পুনরায় চেয়ারম্যান পদে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন। এলাকাবাসীর দাবি, যে ব্যক্তি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের অভিযোগে দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন, তাকে আবারও ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে রাজনৈতিক প্রভাবে।
এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, দোকানপাট, হাট-বাজার থেকে শুরু করে চায়ের আড্ডা সবখানেই এখন একটাই আলোচনা—“আনিসুরের পুনর্বাসন।” স্থানীয়রা প্রশাসন ও গণমাধ্যমের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন যেন এই ব্যক্তি কোনোভাবে ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে পুনর্বাসন না পায়। অন্যথায় আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা হাফিজুল ইসলাম বলেন, “এই লোকটা চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় ইউনিয়ন জিম্মি করে রেখেছিল। ভিজিডি, ভিজিএফ কার্ড থেকে শুরু করে রাস্তা-ঘাটের কাজ সব জায়গায় ঘুষ ছাড়া কিছু হতো না। মানুষ মুখ খুলতেও ভয় পেত। এখন আবার তাকে চেয়ার বসানোর চেষ্টা হচ্ছে, এটা মেনে নেওয়া যায় না।”
অন্য এক বাসিন্দা, দিনমজুর আব্দুল মালেক বলেন, “আনিসুর চেয়ারম্যান থাকাকালীন গরিবদের চাল বিক্রি করত এবং এলাকার লোকজনকে মিথ্যা মামলায় জড়াত। এখন আবার তাকে ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্র হচ্ছে, যা ইউনিয়নের মানুষের সঙ্গে অবিচার।”
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, “যে চেয়ারম্যান জনগণের ভোটে নির্বাচিত হননি, সে জনগণের কথা ভাববে না। তাই তিনি আমাদের দুর্ভোগে ফেলে আজও পর্যন্ত পলাতক রয়েছেন। আমরা নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছি।”
এলাকার তরুণ সমাজও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। স্থানীয় যুবক ফিরোজ আলী বলেন, “একজন পলাতক গুন্ডাকে পুনর্বাসনের মানে হচ্ছে প্রশাসনের ব্যর্থতা। যিনি কোমলমতি ছাত্রদের হত্যা করে পালিয়ে গেছেন, তাকে আবার পদে বসানো মানে অপরাধকে পুরস্কৃত করা।”
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় মামলা রয়েছে। রাজনৈতিক আশ্রয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরেই গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলছেন। সেই ব্যক্তিকেই এখন কিছু প্রভাবশালী মহল অর্থের বিনিময়ে আবারও চেয়ারম্যান পদে বসাতে মরিয়া। স্থানীয়দের ধারণা, এর পেছনে জেলা পর্যায়ের একটি প্রভাবশালী মহল কাজ করছে, যারা অর্থনৈতিক সুবিধা নিতে তাকে ফের ক্ষমতায় আনতে চায়। তাদের আশঙ্কা, এভাবে পলাতক ও বিতর্কিত ব্যক্তিকে পুনর্বাসন করা হলে ইউনিয়নে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটবে এবং প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে।
এলাকাবাসী প্রশাসন ও গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, পলাতক চেয়ারম্যানকে পুনর্বাসনের যেকোনো প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। তা না হলে সাধারণ মানুষ আন্দোলনে নামবে।
এবিষয়ে জানতে ঠাকুরগাঁও জেলার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ পরিচালক স্থানীয় সরকার (ভারপ্রাপ্ত) সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, “শুকানপুকুরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক রয়েছেন। তার অনুপস্থিতিতে একজন প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করছেন। তবে আগের চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর আবার তার দায়িত্বে ফেরার সুযোগ দেখছি না।”
একুশে সংবাদ//এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

