গত চারদিন ধরে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মাঝারি বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে নিচু জমির আমন ধান নুয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্যান্য ফসল ও সবজি ক্ষেতও। হঠাৎ এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমন চাষিদের মাঝে দেখা দিয়েছে গভীর দুশ্চিন্তা ও হতাশা।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ৩০ হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। এছাড়া ৩৭০ হেক্টর জমিতে রবি সবজি চাষাবাদ হয়েছে। বৃষ্টি ও বাতাসে ১০৬ হেক্টর জমির ধান নুয়ে পড়েছে এবং ১০ হেক্টর সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কৃষকদের দাবি, ক্ষতির পরিমাণ সরকারি হিসাবে দেখানো চেয়ে অনেক বেশি।
স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, অনেক নিচু জমিতে ধান পাকতে শুরু করেছে, আবার বেশিরভাগ ক্ষেতেই ধান আধাপাকা অবস্থায় ছিল। হঠাৎ বৃষ্টি ও বাতাসে সেই সব জমির ফসল মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে।
দহবন্দ ইউনিয়নের ধুমাইটারী গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, “বৃষ্টি আর বাতাসে আমার দুই বিঘা জমির পাকা ধান নুয়ে পড়েছে। এক বিঘা জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। অন্তত ১৫ হাজার টাকার মতো লোকসান হবে। এ অবস্থা আরও কয়েকদিন চললে ক্ষতি আরও বাড়বে।”
কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমার তিন বিঘা জমির আধাপাকা ধান নুয়ে পড়েছে। অর্ধেক ফসলই হয়তো আর ঘরে তুলতে পারব না। একেবারে আশা শেষ।”
চরাঞ্চলের আলু চাষি রেজাউল ইসলাম মিয়া জানান, “আমি পাঁচ বিঘা জমি আলু চাষের জন্য তৈরি করেছিলাম। হঠাৎ বৃষ্টিতে সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আবার জমি তৈরি করতে অন্তত ২০ দিন সময় লাগবে।”
অন্যদিকে হরিপুর ডাঙ্গার চরের সবজি চাষি আইজল মিয়া বলেন, “আমি এক বিঘা পেঁয়াজ, এক বিঘা মরিচ এবং এক বিঘা কফি চাষ করেছি। বৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গেছে। প্রায় ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাশিদুল কবির বলেন, “অসময়ের বৃষ্টি ও বাতাসে ১০৬ হেক্টর আমন ধান হেলে পড়েছে এবং ১০ হেক্টর সবজি নষ্ট হয়েছে। এখনই পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ সম্ভব নয়, কারণ আগামী কয়েকদিনও বৈরী আবহাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। এটি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মানুষের কিছু করার নেই। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এ ধরনের অস্বাভাবিক আবহাওয়া দেখা দিচ্ছে।”
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

