AB Bank
  • ঢাকা
  • শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ৯ কার্তিক ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

পবিপ্রবিতে বিধিবহির্ভূত পদোন্নতি, অনিয়মের চক্রে একাধিক কর্মকর্তা



পবিপ্রবিতে বিধিবহির্ভূত পদোন্নতি, অনিয়মের চক্রে একাধিক কর্মকর্তা

মো. কবির সিকদার, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) একজন সহকারী রেজিস্ট্রার। তিনি ২০০৬ সালে কম্পিউটার অপারেটর পদে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পান। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি ও এইচএসসিতে দ্বিতীয় বিভাগ এবং বিকমে তৃতীয় শ্রেণি। তবে শিক্ষাগত জীবনে তৃতীয় শ্রেণি তাঁর পদোন্নতি আটকাতে পারেনি। একবার নয়, তিনবার পদোন্নতি পেয়ে এখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার।

পদোন্নতিতে অডিট আপত্তি থাকা সত্ত্বেও একবার নিয়ম বহির্ভূত পদোন্নতির পর এবার আবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিসমূহকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিনি পরবর্তী পদোন্নতির পথে।

এখানেই শেষ নয়, তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন ও ধোঁয়াশা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরে জমাকৃত এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ নিয়েও রয়েছে বিভিন্ন প্রশ্ন ও ধোঁয়াশা।

শুধু কবির সিকদারই নয়, এমন অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহের (গ্রেড–৬) বিরুদ্ধেও। তিনিও ২০০৬ সালে পবিপ্রবিতে কম্পিউটার অপারেটর পদে যোগ দেন। তিনিও বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়’-এর সনদ জমা দেন। বর্তমানে তারা দুজন আবারও ডেপুটি রেজিস্ট্রার (গ্রেড–৫) পদে উন্নীত হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছেন।একই রকম অভিযোগ রয়েছে একাধিক আরও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান বিধিতে কর্মচারীদের জন্য তিনটি ও কর্মকর্তাদের জন্য দুটি পদোন্নতির নিয়ম থাকলেও সেটি মানছে না বর্তমান প্রশাসন। বরং নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই অবৈধ এসব পদোন্নতির দিকে যাচ্ছে প্রশাসন।

২০২৪ সালে দেশের একটি জাতীয় পত্রিকায় এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে নিয়ম বহির্ভূতভাবে পদোন্নতি নেওয়ার অভিযোগ তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তৎকালীন সময়ে ইউজিসি কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিধিবহির্ভূতভাবে দেওয়া ইনক্রিমেন্ট, গ্রেড ও পদোন্নতি বাতিল করে আবার পে-ফিক্সেশন (বেতনকাঠামো সমন্বয়) করে বেতন স্কেল ও পদ নির্ধারণ করে এবং অতিরিক্ত টাকা দায়ী বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে আদায়ের নির্দেশ দেয়। কিন্তু বেশ কয়েক বছর পার হয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বরং এসব অনিয়ম জারি রেখেই নতুন বিধিবহির্ভূত পদোন্নতির পথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

পবিপ্রবির সাবেক এক ছাত্র, যিনি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, “আমরা যারা মেধা ও যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছি, পিএইচডি করেছি, তারা আজ পিছিয়ে আছি। কিন্তু ভুয়া সনদধারীরা প্রভাব, অর্থ আর রাজনীতির জোরে একের পর এক পদোন্নতি পাচ্ছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সেল-এর এক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “কবির সিকদার ছিলেন ফ্যাসিস্ট; তিনি গত ১৫ বছরে রেজিস্ট্রার অফিসের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন। তার আগের পদোন্নতিতেই অডিট আপত্তি ছিল, এখন আবার কিভাবে তিনি ডেপুটি রেজিস্ট্রার হবেন, তা আমার বোধগম্য নয়। তাছাড়া সাবেক রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু, নওয়াব আলী খান ও ড. কামরুল ইসলামের সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্যের অন্যতম অংশীদার ছিলেন।”

অন্যদিকে মাসুম বিল্লাহের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে— তিনি কর্মজীবনে এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অডিট আপত্তি থাকলেও তিনবার পদোন্নতি পেয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে তার নামে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া, রাজাপুর ও বরিশালে জমি ও বহুতল ভবন রয়েছে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনে একাধিক বিবাহ ও নারী–সংশ্লিষ্ট অনিয়ম নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। তাঁর বড় স্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সেকশন অফিসার, সদ্য সহকারী রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতির জন্য ভাইভা দিয়েছেন।

বিধিবহির্ভূত পদোন্নতির বিষয়ে কবির সিকদার বলেন,“আমার সব পদোন্নতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক হয়েছে এবং এটি আমার তৃতীয় পদোন্নতি।”

 তিনি আরও জানান, “এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সার্টিফিকেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন আছে এবং আইসিটি সেল থেকে যাচাইকৃত।”

অন্যদিকে একই বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত অপর কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহকে ফোন করা হলে তিনি প্রতিবেদকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান। তিনি সাক্ষাৎ ছাড়া কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, “পবিপ্রবির বিধিমালাটি এ মুহূর্তে আমার কাছে নেই। বিধিমালা দেখে যাচাই করবো কোনো অনিয়ম আছে কিনা। যদি অনিয়ম হয়ে থাকে, সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবহিত করা হবে।”

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, “কর্মকর্তা সেলের আবুবকর ও রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ইখতিয়ার ফাইলগুলো যাচাই–বাছাই করে বোর্ডে নিয়ে আসে। তারাই বলতে পারবে কতটুকু বিধিমালায় আছে। তবে সুস্পষ্ট অভিযোগ পেলে সে বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ইকতিয়ার উদ্দিনকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “বিষয়টি সম্পর্কে আমি এখনো অবগত নই। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”


একুশে সংবাদ/এ.জে

সর্বোচ্চ পঠিত - ক্যাম্পাস

Link copied!