মৌলভীবাজার জেলার অন্যতম বৃহৎ প্রাচীন গ্রামীণ হাট শ্রীমঙ্গলের ভৈরব বাজার এখনও শতবর্ষের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঐতিহ্যবাহী এই বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য কেনাবেচা হলেও সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার হাঁস-মোরগ, কবুতর, ছাগল, ভেড়া, মেষসহ বিভিন্ন রকম পোষা পাখি কেনাবেচার জন্য সর্বাধিক খ্যাতি পেয়েছে।
সরজমিনে গতকাল ভৈরব বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, হাটের পশ্চিম দিকে হাঁস-মোরগসহ নানা রকম প্রাণীর মেলা। সারি ধরে ছোট-বড় মোরগ নিয়ে বসেছেন অনেকে। এর মধ্যে যেমন মোরগের ব্যবসায়ী আছেন, তেমনি অনেক নারী-পুরুষ গেরস্ত তাঁদের পোষা মোরগ নিয়ে হাটে এসেছেন। কেউ নিয়ে এসেছেন হাঁস, মোরগের ছানা। অনেকে নিয়ে এসেছেন নানা জাতের কবুতর। কেউ বসেছেন তিতির পাখির ছোট-মাঝারি বাচ্চা নিয়ে। কেউ সাদা-কালো দুই জাতেরই খরগোশ নিয়ে বসেছেন। হাটের পূর্ব দিকের স্থান ছাগলের জন্য নির্ধারিত। হাটে বেশ কিছু পাঁঠাও বিক্রির জন্য তোলা হয়েছে। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে এই হাটে বিক্রির জন্য এসব প্রাণী নিয়ে এসেছে বিক্রেতারা। এতে উপচেপড়া ভিড় ছিল ক্রেতাদের। কয়েক ঘণ্টার কেনাবেচায় জমজমাট হয়ে ওঠে হাটটি। সন্ধ্যার অন্ধকার নামার সঙ্গে সঙ্গেই গুটিয়ে যায় সব আয়োজন। সবকিছু নিয়ে ঘরমুখী হন ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-বিক্রেতা। মুহূর্তেই পরিণত হয় ভাঙা হাটে।
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল সড়কের মধ্যেই পড়েছে ভৈরব বাজারটি। আগে বাজারের একদিকে সড়কের পাশে এই হাট বসত। বর্তমানে বাজারের উত্তর পাশে ব্যক্তিগত জমি ইজারা নিয়ে হাটকে সম্প্রসারিত করা হয়েছে।
স্থানীয়ভাবে ভৈরব বাজার নামেই বেশ পরিচিত এটি। শুধু শ্রীমঙ্গল উপজেলা বা মৌলভীবাজার জেলা নয়, সমৃদ্ধ এ বাজারটির পরিচিতি রয়েছে পুরো সিলেট অঞ্চলে। বিক্রির দিক থেকে জেলার সবচেয়ে বড় পোষা পাখির হাট হিসেবে স্বীকৃত হলেও সংশ্লিষ্ট কারো কারো মতে জেলার প্রাচীন এ বাজারটি পুরো সিলেট অঞ্চলের সর্ববৃহৎ গ্রামীণ বাজার। এ হাটের প্রভাব শুধু পেষা পাখি নয়। বাজার সংলগ্ন অন্যান্য দোকান, হোটেল ও পরিবহন ব্যবস্থাতেও পড়ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এটি শত বছরের পুরোনো। চা-বাগান, হাইল হাওর, সমতলের গ্রামগুলোকে কেন্দ্র করে যুগ যুগ ধরে এটি সম্প্রসারিত হয়েছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রেও এটির অবস্থান ভালো। অন্য হাটবাজারের মতোই এই হাটে মাছ, সবজি, মৌসুমি নানা রকম ফসলসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য বেচাকেনা হয়ে থাকে। প্রতিদিনই হাট বসে। তবে বছর ২০ আগে থেকে এটি নতুনভাবে পরিচিত হয়ে ওঠেছে। এখানে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মোরগ, কবুতর, পোষা পাখিসহ বিভিন্ন ধরনের পোষা প্রাণী বিক্রি হয়ে থাকে।
শুধু আশপাশের গ্রাম নয়; শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর, কমলগঞ্জ, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতা-বিক্রেতা এই হাটে ভিড় করেন। দুপুরের পর থেকে হাটে লোকজনের আসা শুরু হয়। বেলা দুই-তিনটার মধ্যেই হাটটি জমে ওঠে। সন্ধ্যা পর্যন্ত এই হাট চলে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে ধীরে ধীরে হাটটি ভেঙে যায়।
ভৈরব বাজারের ইজারাদার লিটন আহমেদ গতকাল শুক্রবার বলেন, হাটটির বয়স ১০০ বছরের বেশি হবে। তবে ২০ বছর আগে থেকে হাটটি হাঁস, মোরগ, ছাগলসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর জন্য পরিচিত হয়ে ওঠেছে।
মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ জেলাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন তাঁদের পোষা হাঁস, মোরগ, ছাগল নিয়ে এই হাটে আসেন। পাইকারেরাও অনেক ধরণের প্রাণী নিয়ে আসেন। প্রতি শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে হাট শুরু হয়, সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত হাট চলে। আগে বাজারের একদিকে সড়কের পাশে এই হাট বসলেও এখন বাজারের উত্তর পাশে ব্যক্তিগত জমি ইজারা নিয়ে হাটকে সম্প্রসারিত করা হয়েছে। এই হাটে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে পোষা প্রাণী নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। শৌখিন লোকজন এখানে ভিড় করছেন, তাঁরা ঘুরে ঘুরে প্রাণী পছন্দ করছেন। দরদাম করছেন। দরদামে পোষালে খাঁচাসহ পাখি, কবুতর বা অন্য প্রাণী নিয়ে যাচ্ছেন।
রাজনগর থেকে আসা একজন বিক্রেতা জানান, তিনি দুটি মেষ নিয়ে এসেছিলেন। এ দুটিই তাঁর পোষা। দাম উঠেছে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তিনি ১২ হাজার টাকার নিচে তিনি বিক্রি করতে চাইছেন না। তাই মেষ দুটি ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন। বাজারের ব্যবসায়ী ফাহিম হাসান বলেন, আমাদের ভৈরব বাজার বাজার শুধু মৌলভীবাজার নয়, পুরো সিলেট অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও পুরাতন গ্রামীণ হাটার। এ বাজারে দেশীয় বিভিন্ন প্রাণী কিনতে আসেন পুরো সিলেট অঞ্চলের মানুষ।
শুক্রবার বাজারটি লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। এ বাজারের কারণেন ভৈবব বাজারের অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও ওইএদিন ভালো ব্যবসা হয়। স্থানীয়রা মনে করেন, ভৈরব বাজার আজ শুধু একটি হাট নয়, এটি একটি ঐতিহ্য ও এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রাণ।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

