দক্ষিণ অঞ্চলের আবহাওয়ায় শীতের আমেজ আসতে শুরু করেছে। আসন্ন শীত মৌসুমে যশোর অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস আহরণের জন্য অভয়নগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের গাছীরা খেজুর গাছ প্রস্তুত করতে শুরু করেছেন।
অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুর গাছ এখন চলছে গাছীদের শৈল্পিক পরিচর্যার প্রথম ধাপ। খেজুর রস সংগ্রহের জন্য বিশেষভাবে পারদর্শী স্থানীয় মানুষদের গাছী বলা হয়। এ গাছীরা নিপুণ হাতে, বিশেষভাবে তৈরি দা ব্যবহার করে খেজুর গাছ চাঁচাছোলা করা শুরু করেছেন। এটি রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুতির প্রথম ধাপ।
প্রায় ১৫ দিনের মধ্যে শুরু হবে বাশ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি নলি বসানো। এরপরের ধাপে শুরু হবে রস সংগ্রহের কাজ, যা চলবে প্রায় মাঘ মাস পর্যন্ত। হেমন্তের প্রথম দিকে বাজারে উঠতে শুরু করবে সুস্বাদু খেজুরের পাটালি ও গুড়।
প্রতি চার দিন পরপর বিশেষ প্রক্রিয়ায় গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য হাড়ি ঝুলানো হবে। পরদিন ভোরে সেই হাড়ি থেকে রস সংগ্রহ করা হবে। প্রথম দিনের রস সাধারণত পান করা বা পিঠা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয় দিনের রস দিয়ে সাধারণত গুড় তৈরি করা হয়। বড় টিনের পাত্রে দীর্ঘ সময় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করা হয়।
শীতের দিন মানেই গ্রামাঞ্চলে খেজুর রস ও গুড়ের ঘ্রাণ, শীতের সকালে খেজুরের তাজা রস, রসের বিভিন্ন প্রকার পিঠা এবং পায়েসের আয়োজন। প্রতিদিনই কোনো না কোনো বাড়িতে চলবে খেজুর রস থেকে তৈরি খাদ্যের প্রস্তুতি। ভোরে সংগ্রহ করা খেজুরের রসের স্বাদ অতুলনীয়।
শুধু পান করাই নয়, এর থেকে তৈরি হয় সুস্বাদু পাটালি ও গুড়। খেজুর গুড় ছাড়া যশোর অঞ্চলের শীতকালীন উৎসব কল্পনাও করা যায় না।
উপজেলার কামকুল গ্রামের গাছী জসিম বলেন, "এক সময় এলাকায় অনেক খেজুর গাছ ছিল, এখন অনেক কমে গেছে। খেজুর গাছের সল্পতা, প্রচন্ড পরিশ্রম ও মৌসুমি পেশা হওয়ায় অনেক গাছী তাদের পেশা পরিবর্তন করেছেন। তবে খেজুর রস থেকে উৎপাদিত গুড়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমরা আমাদের ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।"
অভয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন জানান, "উপজেলায় মোট খেজুর গাছের পরিমাণ ১৩৬,৬৩০টি। এর মধ্যে পূর্ণবয়স্ক গাছ ২৮,৯৮০টি। এই গাছ থেকে প্রায় ৫২,৭৫০ লিটার রস এবং ৫,১৭৫ কেজি গুড় উৎপাদনের আশা করছি।"
একুশে সংবাদ/এ.জে