জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট ইউনিয়নের পাঁচগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হলো এক ব্যতিক্রমী ও মানবিক চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্প। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান চন্দনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং জার্মানভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবিক সংগঠন ‘অন্ধেরী হিলফে বন জার্মানী’-এর সহযোগিতায় আয়োজিত এ ক্যাম্পে দিনব্যাপী ৫০০ জনের বেশি মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেন।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকাল থেকেই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগীরা ভিড় করতে থাকেন। চোখের বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত শিশু, নারী ও বয়স্করা বিনামূল্যে চক্ষু পরীক্ষা, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চশমা গ্রহণ করেন।
চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত ছিলেন চারজন অভিজ্ঞ চক্ষু বিশেষজ্ঞসহ একটি দক্ষ মেডিকেল টিম। তারা প্রতিটি রোগীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ ও মানসম্মত চশমা সরবরাহ করেন। পুরো চিকিৎসা কার্যক্রমটি ছিল সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান চন্দন বলেন, “যেসব রোগীর ছানির সমস্যা পাওয়া গেছে, তাদের তালিকা করা হয়েছে। পরবর্তীতে বিনামূল্যে অপারেশনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ক্যাম্পের উদ্দেশ্য শুধু চোখের চিকিৎসা নয়, সমাজের উপেক্ষিত ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের পাশে দাঁড়ানো। আগামীতে আরও বড় পরিসরে এই কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।”
বৃদ্ধ আব্দুল জব্বার বলেন, “আমার দৃষ্টিশক্তি কয়েক বছর ধরে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল। আজকে পরীক্ষা করালাম, ডাক্তার বললেন চোখে ছানি পড়েছে। তারা বলেছেন, পরবর্তীতে অপারেশন করাবেন—এটা আমাদের মতো গরিব মানুষের জন্য বড় সহায়তা।”
মাদাই গ্রামের জুবাইদা বেগম বলেন, “চোখে অনেক দিন ধরে সমস্যা হচ্ছিল, কিন্তু চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য ছিল না। এখানে এসে ডাক্তার দেখালাম, ওষুধ আর চশমা দুইটাই ফ্রি পেয়েছি। ভাবতেই পারিনি এমন সুযোগ পাব।”
নন্দাইল গ্রামের কৃষক আলিমউদ্দিন জানান, “আমি একজন দিনমজুর। চোখের দৃষ্টি কমে যাওয়ায় কাজ করতে কষ্ট হচ্ছিল। এখানে এসে পরীক্ষা করালাম, ডাক্তার বললেন—চোখে সামান্য ইনফেকশন। ওষুধ আর ফ্রি চশমা পেয়েছি, এখন অনেক স্বস্তি লাগছে।”
পুনট হাইস্কুলের ছাত্র শাহরিয়ার কবির বলেন, “বোর্ডে ঠিকমতো দেখতে পারতাম না, পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছিলাম। আজ চোখ চেক করিয়ে চশমা পেয়েছি। এতে লেখাপড়ায় আগের চেয়ে মনোযোগ বাড়বে।”
স্থানীয় সমাজসেবক মোক্তাদুল ইসলাম মুকুট বলেন, “এ ধরনের স্বাস্থ্যসেবামূলক কার্যক্রম সাধারণত শহরে হয়। গ্রামে এসে এত মানুষের সেবা দেওয়া সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ।”
পাঁচগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস হোসেন বলেন, “বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই আয়োজন হওয়ায় স্থানীয় জনগণ ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা উপকৃত হয়েছেন। এমন সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রামীণ জনপদে স্বাস্থ্যসচেতনতা বাড়ায়।”
একুশে সংবাদ/এ.জে