গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় শ্রী শ্রী বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষে আড়াইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী বিলবাঘীয়ার নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার সকাল থেকেই উপজেলার কালিগঞ্জবাজার সংলগ্ন খালে নৌকাবাইচের আয়োজন শুরু হয়। নৌকাবাইচ দেখতে সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী খালের দু’পাড়ে ভিড় জমায়। কালিগঞ্জ বাজার প্রান্ত থেকে বুরুয়া বড় ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্য জুড়ে নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নৌকাবাইচে অংশগ্রহণকারি নৌকাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল—বাছাড়ি, জয়নাগরি, কোষা, টালী ও ছান্দী। মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও কোটালীপাড়া থেকে বিভিন্ন নৌকা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতা প্রায় তিন ঘন্টা ধরে চলে।
নৌকাবাইচ চলাকালীন টিকারা, কারা ও কাশির বাদ্যে খাল প্রান্ত মুখরিত হয়ে ওঠে। মধ্য-শেষে সূর্য পশ্চিম দিগন্তে ঢলে গেলে মাঝি-মাল্লারা সুর দিয়ে জারি, সারি ও ভাটিয়ালি গান গাইতে গাইতে ফিরে যান।
নৌকাবাইচ উপলক্ষে খালের দু’পারে মেলা বসে। দোকানপাট, মনোহরি, চানাচু, খেলনা, নাগোরদোলা, ছবির দোকান, কাশাপিতলেরসহ বিভিন্ন দোকান বসে থাকে। দর্শকদের মধ্যে আনন্দের ঢেউ দেখা যায়। এবছর আগের বছরের তুলনায় লোকসমাগম এবং নৌকার সংখ্যা বেশি ছিল।
বুরুয়া থেকে নৌকা বাইচ দেখতে আসা ভোলা বালা মনিশ বলেন, "আমাদের এলাকায় নৌকাবাইচ প্রায় আড়াইশ বছরের বেশি সময় ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবছর দর্শক এবং নৌকার সংখ্যা বেশি ছিল। দুপুরের পর নৌকার কুইজ প্রতিযোগিতাও শুরু হয়। নৌকাবাইচ দেখে আমরা অনেক আনন্দ উপভোগ করেছি।"
গোপালগঞ্জ থেকে আসা সুনির্মল বিশ্বাস বাপ্পী বলেন, "দোকানপাট, লোকজন ও নৌকা সবই বেশি হয়েছে। আমরা পরিবারসহ নৌকাবাইচ দেখছি। সারা বিকেলটা আনন্দে কাটেছে।"
এ সময় উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম মহিউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আবুল বসার হাওলাদার, সাংগঠনিক সম্পাদক ছলেমান শেখ, উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব আবদুস মান্নান শেখ ও আহ্বায়ক রঞ্জন মল্লিকসহ বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ।
কলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিজন বিশ্বাস বলেন, "কোটালীপাড়া উপজেলার কালিগঞ্জে নৌকা বাইচ এখনও বর্ণিলভাবে অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষে নৌকা বাইচের মাধ্যমে মৌসুমের বাইচ শুরু হয়। নৌকা বাইচ আয়োজন কেউ নির্ধারণ করেন না, স্থানীয়রা নিজেরাই আয়োজন করেন। তাই এটি স্বগৌরবে টিকে আছে। প্রতিবছর কালিগঞ্জ-বুরুয়া খালে শ্রী শ্রী বিশ্বকর্মা পূজায় একদিন, শ্রী শ্রী লক্ষী পূজায় তিন দিন নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ভিন্ন সময়ে কোটালীপাড়ার বিভিন্ন স্থানে নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়।"
নৌকা বাইচের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন কোটালীপাড়া থানা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
একুশে সংবাদ/গো.প্র/এ.জে