শেরপুর ২৫০ শয্যা শেরপুর সদর হাসপাতালে রোববার ( ১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে কয়েকটি গরু অবাধে ঘোরাফেরা করার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এরপর থেকে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ ও প্রোফাইলে এ ছবি পোস্ট হতে থাকে ৷
সাম্প্রতিক (সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর) দিনব্যাপী বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু করেন সচেতন মহল। এমনকি এ ছবি দেখে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাও প্রকাশ করেন তীব্র প্রতিক্রিয়া।
জানা যায়, শেরপুরের পাঁচ উপজেলার প্রায় ১৬ লাখ মানুষের জন্য ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও এখনও শূন্য পদে চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ হয়নি। দালালদের দৌরাত্ম্য, যন্ত্রপাতি বিকল, মাদকসেবীদের মাদক সেবন এবং কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতায় রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ।
স্থানীয় কেউ কেউ বলেছেন, কৃর্তপক্ষের খুঁটির জোর কোথায়? যে এত সমালোচনার পরও হাসপাতালের তত্বাবধায়কসহ আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তারা বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে কয়েক মাস ধরে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালটির স্বাস্থ্যসেবা একদম ভেঙ্গে পড়েছে। কর্মকর্তা কর্মচারীদের উদাসীনতা এবং নানা অব্যবস্থাপনা এর অন্যতম মূল কারণ হিসেবে দেখছেন রোগী ও স্বজনরা।
হাসপাতালের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ৫৮ পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৩০ জন। এর মধ্যে সিনিয়র কনসালটেন্ট ১০টির মধ্যে নয়টি, জুনিয়র কনসালটেন্ট ১৩টির মধ্যে আটটি, অ্যানেসথেটিস্ট তিনটির মধ্যে একটি, রেজিস্ট্রার নয়টির মধ্যে পাঁচটি পদ শূন্য। নার্সের ৮৭টি পদের মধ্যে নয়টি শূন্য রয়েছে।
সেচ্ছাসেবী সংগঠন রক্তসৈনিক বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মো. আল-আমিন রাজু বলেন, ‘জেলার মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল হওয়ার কথা ছিল এ হাসপাতালটি। কিন্তু সেটি না হয়ে ভোগান্তির আরেক নাম যেন শেরপুর জেলা সদর হাসপাতাল। দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতালের সেবার মান উন্নত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের দাবি জানাই।’
সেচ্ছাসেবী সংগঠন আজকের তারুণ্যের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রবিউল ইসলাম রতন বলেন, ‘দায়িত্বে অবহেলার কারণেই শেরপুর জেলা হাসপাতালের এ করুণ অবস্থা। আমরা দেখছি জেলার এ হাসপাতাল নিজেই রোগাক্রান্ত। যদি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতেন। তাহলে এসব সমস্যার সৃষ্টি হতে না। আমরা হাসপাতালে সেবার মান বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কাজ করে আসছি। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো ইচ্ছাই নেই ভালো কিছু করার।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখ্য সংগঠক মোর্শেদ জিতু তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘গত রাতে হাসপাতালে গরু চলাচল করেছে- এটা নতুন কিছু না। হাসপাতালের দুর্নীতি, অনিয়ম, দালাল নির্মূল করতে না পারায় পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেলিম মিঞা মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে গরু পাহারা দেয়া দায়িত্ব আমার না।’
এ কথা বলেই তিনি ফোনের লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে তাকে বার বার ফোন দেয়া হলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।
তবে এব্যাপারে শেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ শাহীন বলেন, ‘আমি ঘটনাটি জানার পরপরই হাসপাতালে পরিদর্শন করেছি। গেইটে দায়িত্বে থাকা আনসারদের অবহেলার কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. সেলিম মিয়ার আচরণ দায়িত্বশীলতার পরিচয় বহন করে না। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’
একুশে সংবাদ/শে.প্র/এ.জে