সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে দীর্ঘদিন ধরে চলা নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে অবশেষে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযান চালানো হয়েছে। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে দুদক সমন্বিত পাবনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাধন চন্দ্র সূত্রধরের নেতৃত্বে একদল কর্মকর্তা কলেজ ক্যাম্পাসে উপস্থিত হন। তারা অফিস নথিপত্র পরীক্ষা, বিভিন্ন খাতের কাগজপত্র জব্দ এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করেন।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, বিশেষ করে পরিবহন খাত নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরিবহন বাবদ অর্থ নেওয়া হলেও কলেজে বাস্তবে কোনো হাইস গাড়ি নেই। অথচ লগবুকের মাধ্যমে কিলোমিটার দেখিয়ে ব্যয়ের হিসাব দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এ গাড়ি মূলত অধ্যক্ষ ও কিছু শিক্ষক ব্যবহার করেন, অথচ ব্যয়ভার চাপানো হয় শিক্ষার্থীদের ওপর। বিষয়টি দুদকের কর্মকর্তাদের নজরেও আসে। সহকারী পরিচালক সাধন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, “আমরা পরিবহন খাতের লগবুক পরীক্ষা করছি। কোথাও শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের প্রমাণ নেই। বরং অধ্যক্ষ ও শিক্ষকরা ব্যবহার করেছেন এবং অস্বাভাবিক খরচ দেখানো হয়েছে।”
শুধু পরিবহন খাত নয়, শিক্ষার্থী কল্যাণ তহবিল, খাদ্য বাবদ অতিরিক্ত ব্যয়, সরকারি বরাদ্দের অপব্যবহার এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও পদোন্নতি নিয়েও নানামুখী অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থীদের একাংশ অভিযোগ করেন, ফি বাবদ যে অর্থ তোলা হয়, তার সঠিক ব্যবহার হয় না। এতে শিক্ষার্থীদের আর্থিক চাপ বাড়লেও শিক্ষা-সুবিধা তেমন উন্নত হয়নি।
অভিযান চলাকালে শিক্ষক ও কর্মচারীদের অনেকে দুদকের সঙ্গে সহযোগিতা করেন। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, অধ্যক্ষের একক সিদ্ধান্তে অনেক অর্থ লোপাট হয়। আপত্তি জানালেও তা গুরুত্ব পায় না।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “দুদক নিয়মিত তদারকি করছে। আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করছি। যেকোনো অভিযোগ তারা খতিয়ে দেখুক, তাতে আমাদের আপত্তি নেই।”
দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে বিস্তারিত প্রতিবেদন কমিশনে পাঠানো হবে। এরপর সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সচেতন মহল মনে করছে, এ অভিযানের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের অভিযোগের সত্যতা যাচাই হবে এবং অনিয়মের দায়ীদের আইনের আওতায় আনা গেলে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা পাবে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, “কলেজের পরিবহন খাতে যে অর্থ দিই, তার সঠিক ব্যবহার চাই। শিক্ষা জীবনে দুর্নীতির বোঝা বইতে চাই না।”
সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে দুদকের এ অভিযান শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের নয়, গোটা শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির প্রশ্নকে সামনে নিয়ে এসেছে। এখন দেখার বিষয়, তদন্ত শেষে কী পদক্ষেপ নেয় দুদক এবং প্রকৃতপক্ষে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা যায় কি না।
একুশে সংবাদ/সি.প্র/এ.জে