কারা নির্যাতনের ৭ বছর পূর্ণ হলো। তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের আশির্বাদপুষ্ট সড়ক মাফিয়াদের দেওয়া মিথ্যা গায়েবি মামলায় কারা নির্যাতন শেষ হলেও ঐ মামলার ঘানি এখনও টানছি।
আমার অপরাধ: আমি এ দেশের লক্ষ-কোটি শোষিত, অধিকারবঞ্চিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত যাত্রী সাধারণের পক্ষে কথা বলি। তাদের সুযোগ সুবিধার আদায়ে রাজপথে সোচ্চার ও প্রতিবাদী।
গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য, যাত্রী হয়রানি, বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, চাঁদাবাজী, সড়ক দুর্ঘটনা ও অন্যায় কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিগত দুই যুগ ধরে আপোষহীন আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে সোচ্চার। ফলে বিভিন্ন সময়ে বারবার কতিপয় দুর্নীতিবাজ পরিবহন মালিক, শ্রমিক, সরকারি কর্মকর্তা ও আমলাদের রোষানলে পড়তে হয়েছে আমাকে।
তারা সুযোগ বুঝে সময়ে সময়ে সরকারের মন্ত্রী, সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের ক্ষেপিয়ে তুলেছেন আমার বিরুদ্ধে। এর ধারাবাহিকতায় তৎকালীন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে আমাকে ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর রাতের আধাঁরে দেশের আলোচিত এক মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বাদীবিহীন চাঁদাবাজীর মামলায় গ্রেফতার করা হয়। আমার নাম ও ঠিকানা না থাকার কারণে মামলাটি দায়ের হওয়ার দিনই মিরপুর মডেল থানা পুলিশ নারায়ণগঞ্জের সানারপাড়ের বাসা থেকে আমাকে গ্রেফতার করে।
জামিনে বের হওয়ার পরে জানতে পারি, মিরপুর থানার পুলিশ আমার সন্ধানে কয়েক দিন ধরে এলাকায় ঘুরছিল। আমি যখন জেলে ছিলাম, তখনই এই গায়েবি মামলার হেনস্তার বিষয়গুলো পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশন মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়।
দেশের যাত্রী হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্য, পরিবহন বিশৃঙ্খলা ও সড়ক দুর্ঘটনা যখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন যাত্রীস্বার্থ রক্ষায় বলতে কেউ ছিল না। সেই সময়ের দাবিতে, আজ থেকে প্রায় দুই যুগ পূর্বে, আমি ও আমার কয়েকজন বন্ধু দেশের যাত্রীস্বার্থ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে গড়ে তুলেছিলাম বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এই সংগঠনের দীর্ঘ দুই যুগের আন্দোলন সংগ্রামে দেশের পরিবহনে শৃঙ্খলা, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী অঙ্গীকারসহ সরকারের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী মহল থেকে একাধিক নির্দেশনা এসেছে।
কিন্তু কায়েমী স্বার্থপর কিছু গোষ্ঠী আন্দোলনকে থামাতে হামলা, হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে। ব্যর্থ হয়ে তারা মিরপুর থানায় কথিত বাদীবিহীন চাঁদাবাজীর মামলা দায়ের করে, আমাকে গভীর রাতে গ্রেফতার করে।
মিথ্যা ও গায়েবি মামলার প্রতিবাদে দেশের বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ, দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে উঠে। পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালত আমাকে ১০ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি দিলেও পুলিশ আরেক মামলায় আমাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালায়। আদালত মামলাটি খারিজ করলে ১৩ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আমি মুক্তি লাভ করি। আজও সেই মামলার ঘানি টানতে হচ্ছে।
কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও এখন যেন পুরো বাংলাদেশই আমার জন্য কারাগার। স্বাধীন দেশে আমরা যেন পরাধীন নাগরিক!
ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই, কেবল চরিত্র বদলেছে। তারা নানাভাবে চেষ্টা করছে—আমার চরিত্রে কলঙ্ক লাগানো, আমাকে দুর্নীতিবাজ বা কোটি কোটি মালিক সাজানো।
তবে দেশের নির্যাতিত, নিপীড়িত, অধিকারবঞ্চিত সাধারণ মানুষের এই আন্দোলনকে আমি পবিত্র ইবাদত মনে করি। মহান আল্লাহর রহমত ও সাহায্য সাথে রয়েছে। তাই ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হতে পারেনি।
একুশে সংবাদ/চ.প্র/এ.জে