নীলফামারীর উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) শ্রমিকদের সঙ্গে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সংঘর্ষে একজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১০ জন।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত শ্রমিকের নাম হাবিবুর রহমান হাবিব (২১)। তিনি সদর উপজেলার সংলশী ইউনিয়নের কাজিরহাট এলাকার দুলাল হোসেনের ছেলে এবং উত্তরা ইপিজেডের ইকু ইন্টারন্যাশনাল (স্পিনিং অ্যান্ড কম্পোজিট) কোম্পানির কর্মী।
নীলফামারী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ফরহান তানভিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, হাবিবের বুকে গুলিবিদ্ধ হওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে।
ঘটনার পেছনের প্রেক্ষাপট জানা গেছে, উত্তরা ইপিজেডের এভারগ্রিন প্রোডাক্টস ফ্যাক্টরি (বিডি) লিমিটেডের শ্রমিকরা চার দিন ধরে ন্যায্য বেতন, অতিরিক্ত কাজের মূল্য পরিশোধ এবং ছাঁটাইকৃত পুরাতন শ্রমিকদের পুনর্বহালের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছিলেন। এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে ইপিজেডের অন্যান্য কোম্পানির শ্রমিকরাও একত্রিত হন।
অভিযানকালে শ্রমিকরা মূল ফটকে প্রবেশের চেষ্টা করলে রক্ষিরা বাধা দেয়। পরে শ্রমিকরা প্রধান সড়ক অবরোধ করলে নীলফামারী-সৈয়দপুর মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটায়। আতঙ্কে আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, সাধারণ মানুষ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়। সংঘর্ষের সময় হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
আহতদের মধ্যে ছয়জন নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আহতরা হলেন মো. মোমিনুর রহমান (২৫), মো. শাহিন (২৬), নুর আলম (৩০), মোস্তাক আহমেদ (২৫), লিপি আক্তার (২৬) ও জমিলা খাতুন (৩৫)।
কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টানা আন্দোলনের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯-এর ধারা ১২(১) অনুযায়ী ২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিষ্ঠানটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তী নোটিশে পুনরায় খোলার কথা জানানো হবে।
শ্রমিকরা মোট ২৩ দফা দাবি তুলেছেন। এর মধ্যে রয়েছে: উৎপাদন টার্গেট কমানো, ওভারটাইম নিশ্চিত করা, ছুটি যথাযথভাবে দেওয়া, বেতন ও ভাতা সময়মতো পরিশোধ, আবাসন ও প্রমোশনের জটিলতা নিরসন, সকাল ৭টার আগে ডিউটি না রাখা, গর্ভবতী শ্রমিকদের বিশেষ সুবিধা, নারী শ্রমিকদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ করা, ক্ষুদ্র সমস্যার কারণে চাকরিচ্যুত না করা ।
নিহত হাবিবুর রহমানের বড় ভাই আশিকুর রহমান বলেন, “হাবিব ইকু ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি নিটিং কারখানায় রাতের ডিউটি শেষ করে ইপিজেড থেকে বের হচ্ছিল, তখন সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়।”
উত্তরা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল জব্বারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম আর সাঈদ জানান, “আমরা এখনো সড়কে অবস্থান করছি এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছি।”
একুশে সংবাদ/নী.প্র/এ.জে