পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি)-এর বহুল আলোচিত লোন কেলেংকারি নিয়ে গঠিত নতুন তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন। তবে যিনি তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব, তার বিরুদ্ধেই একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ফলে তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক হারুনুর রশীদ ও অধ্যাপক স্বদেশ চন্দ্র সামন্তকে ম্যানেজ করেই উপ-পরিচালক থেকে পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) পদটি বাগিয়ে নেন জসিম উদ্দিন। পদোন্নতি পাওয়ার পর থেকেই তিনি নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা।
জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
১. হিসাব শাখার সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার শিকদারের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে ক্যাশবুক, লেজার বুক, ব্যাংক বই ও জমা রসিদ বুঝে না নিয়েই অব্যাহতি দেওয়া।
২. ব্যক্তিগত স্বার্থে অভিযুক্ত ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট আবু সালেহ ইছাকে ক্যাশিয়ারসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো।
৩. প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা লোপাটের মূল হোতা আবু সালেহ ইছার নিজ খরচে পরিবার-পরিজনসহ একাধিকবার ভারতে ভ্রমণ।
৪. উৎকোচ গ্রহণ করে ঠিকাদারদের নানা অবৈধ সুবিধা প্রদান।
৫. প্রকৌশল ও পরিকল্পনা-উন্নয়ন বিভাগের বিভিন্ন উন্নয়নকাজে কমিশন (পারসেন্ট) গ্রহণ।
৬. দুর্নীতির টাকায় বরিশাল শহরে আলিশান ফ্ল্যাট, পটুয়াখালী ও কুয়াকাটায় স্ত্রীর নামে জমি ক্রয় এবং পটুয়াখালী শহরের হেতালিয়া এলাকায় প্রায় ১ একর ২০ শতক জমি কেনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার শিকদারের কাছ থেকে সঠিক নিয়মে ক্যাশবুক, লেজার বুক, ব্যাংক বই ও জমা রসিদ বুঝে নেওয়া হয়নি। এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই আবু সালেহ ইছা কোটি কোটি টাকার কেলেংকারি ঘটিয়েছে। অথচ যিনি তদন্তের দায়িত্বে, তার বিরুদ্ধেই অনিয়মের পাহাড়। আসলে সর্ষের মধ্যেই ভূত।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোন কেলেংকারি তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও হিসাব শাখার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জসিম উদ্দিন একুশে সংবাদকে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল আমাকে জড়াতে চাচ্ছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক মো. আবদুল লতিফ বলেন, “লোন কেলেংকারি তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আমি। সদস্য সচিবের নামে অভিযোগ থাকলেও আমরা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত চালাচ্ছি। নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।”
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বলেন, “তদন্তের স্বার্থে নতুন কমিটির সদস্যদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না।”
ভাইস চ্যান্সেলরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
পবিপ্রবিতে কোটি টাকার লোন কেলেংকারি নিয়ে তদন্তের জন্য নতুন কমিটি গঠিত হলেও সেই কমিটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা সদস্য সচিব জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধেই অভিযোগের পাহাড় রয়েছে। এতে প্রশ্ন উঠেছে—দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত একজন কর্মকর্তা কীভাবে আবার দুর্নীতি তদন্তের দায়িত্বে আসতে পারেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে-বাইরে এ নিয়ে চলছে জোর আলোচনা।
সজিব সরদার.প্র/এ.জে