মৌলভীবাজার জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ছুটি না নিয়ে বিদেশে চলে যাওয়ার অভিযোগে জেলায় ৪৮ জন সহকারী শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এছাড়া কর্মস্থলে দীর্ঘ অনুপস্থিতি, চাকরি না ছেড়ে বিদেশে অবস্থান এবং অসদাচরণের কারণে আরও ৩৬ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১ হাজার ৫২টি। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন ৫ হাজার ১৫৬ জন। তবে সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদ ২২৩টি এবং প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ ২৭৪টি। শিক্ষকরা বিদেশে চলে যাওয়ায় সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হোসনে আরা খানম বলেন, “আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষক শেখ সায়মা আজিজ ছুটি না নিয়ে যুক্তরাজ্যে চলে গেছেন। তার স্থলাভিষিক্ত শিক্ষক এখনও যোগদান করেননি।”
রাজনগর উপজেলার চাটুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কাবেরী রানী দেবও একইভাবে ছুটি নিয়ে বিদেশে গেছেন। মাইজগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইসরাত জেরিনও ছুটির অজুহাতে বিদেশে পাড়ি জমান।
মাইজগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস খান বলেন, “সহকারী শিক্ষক ইসরাত জেরিন প্রায় ১১ বছর চাকরি করেছেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এক মাসের ছুটি নেন। পরে তিনি বিদেশে চলে গেছেন। তার পরিবর্তে অন্য বিদ্যালয় থেকে একজন শিক্ষক দেওয়া হয়েছিল, তবে তিনি এখনও যোগদান করেননি। ফলে শিক্ষক সংকট কাটছে না।”
একই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আগনসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্যামলী খানম, সদর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তাহমিদা ইসলাম, কমলগঞ্জের কাউয়ারগলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমরজিৎ স্বর্ণকার, সতিঝিরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নোভা নাওয়ার এবং রাজনগরের চাটুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাবেরী রানী দেবের ক্ষেত্রে।
অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার ভিত্তি হলেও শিক্ষকের অনুপস্থিতি দীর্ঘদিন ধরে পাঠদান ব্যাহত করছে। শিক্ষার্থীরা সঠিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সফিউল আলম জানান, “আমি যোগদান করার পর চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ২৯ জনকে পলায়নের অভিযোগে বরখাস্ত করেছি। এ ছাড়া চারজনকে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত মোট ৪৮ জন সহকারী শিক্ষককে পলায়নের অভিযোগে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাঁরা আর চাকরিতে ফিরতে পারবেন না। এছাড়া চাকরি না ছেড়ে বিদেশে পলায়ন ও অসদাচরণের অভিযোগে জেলায় আরও ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে।”
একুশে সংবাদ/মৌ.প্র/এ.জে