সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার হয়ে অবশেষে দেশে ফিরেছেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের বাউরা গ্রামের সাহের বানু লিপি। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোছা. নুসরাত সুলতানার মানবিক ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তাকে দেশে ফেরানো সম্ভব হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয়ভাবে জেলা প্রশাসকের প্রশংসা ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ১৫ আগস্ট দেশে ফেরেন লিপি। এরপর থেকেই গ্রামবাসীরা দলে দলে তার বাড়িতে ভিড় করছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, অভাবের কারণে প্রায় ৮-৯ মাস আগে তিনি একমাত্র শিশু কন্যাকে নানীর কাছে রেখে সৌদি আরবের রিয়াদে পাড়ি জমান। সেখানে এক পুলিশ কর্মকর্তার বাড়িতে কাজ করার সময় তিনি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। এমনকি জীবনের জন্য হুমকির মুখে পড়েন। একপর্যায়ে মোবাইল ফোনে পরিবারের কাছে নির্যাতনের বিষয়টি জানান তিনি।
খবর শুনে হতাশায় পড়ে যান তার মা কোহিনুর বেগমসহ পরিবারের সদস্যরা। ঠিক তখনই লিপির ছোট বোন কলেজছাত্রী মারুফা রুমী হোয়াটসঅ্যাপে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানার কাছে সাহায্যের আবেদন জানান। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিক প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠান এবং ভিন্ন চ্যানেলেও যোগাযোগ শুরু করেন।
এই প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করেন কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি লুৎফর রহমান। তিনি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. নেয়ামতউল্লাহ ভূঁইয়া ও আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির খোঁজ নিয়ে নিয়মিত ফলোআপ করেন।
অবশেষে সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় লিপিকে দেশে ফেরানো সম্ভব হয়। নিজের কোলজুড়ে সন্তানকে পেয়ে তিনি জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানান। একইসঙ্গে তিনি দাবি জানান—“বাংলাদেশ থেকে যেন কোনো নারীকে সৌদির মতো দেশে আর না পাঠানো হয়।”
লুৎফর রহমান বলেন, “রাজনৈতিক জীবনে অনেক কাজ করেছি, তবে এই মানবিক কাজে সহযোগিতা করতে পারা আমার জীবনের অন্যতম বড় পাওয়া। জেলা প্রশাসক বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিলে হয়তো আজকের গল্পটা অন্যরকম হতে পারত।”
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা বলেন, “আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করেছি বলে একজন নির্যাতিত নারীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। নিঃসন্দেহে এটি আনন্দের ও প্রশংসার মতো একটি কাজ।”
একুশে সংবাদ/কু.প্র/এ.জে