“শিক্ষা শুধু পরীক্ষার ফল নয়, এটি একটি প্রজন্ম গঠনের নির্মাণ প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়াকে শুদ্ধ ও গুণগত করতে হলে প্রতিটি স্তরে আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে”—এমন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে ব্যতিক্রমধর্মী কর্মসূচি পালন করেছেন উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলী সুজা।
সোমবার (৪ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে উজিরপুর উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে ধারাবাহিকভাবে তিনটি শিক্ষামূলক কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ.বি.এম. জাহিদের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইউএনও মো. আলী সুজা।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সরকারি ডব্লিউ বি ইউনিয়ন মডেল ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক মো. শাহ আলম, দোসোতিনা আহমদিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. সিদ্দিক উল্লাহ, হাবিবপুর বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জাকারিয়া মাস্টার, বড়াকোঠা ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষিকা মারুফা খানম বিউটি, জয়শ্রী মুণ্ডপাসা এসএবিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সেকেন্দার আলী, সোনারবাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তারিক মোহাম্মদ আল মামুন এবং হারতা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ বানীকান্ত হালদার।
এই কর্মসূচিতে উপজেলার ৫২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন। অংশ নেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও।
বক্তারা বলেন, “গুণগত শিক্ষা মানে শুধু পাসের হার নয়, বরং তা একজন শিক্ষার্থীর মূল্যবোধ, দক্ষতা ও ভবিষ্যৎ গঠনে ভূমিকা রাখে।” ইউএনও তার বক্তব্যে শিক্ষার মৌলিক দিক, সামাজিক চ্যালেঞ্জ এবং করণীয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সুস্থ মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করতে অভিভাবক, শিক্ষক ও প্রশাসনকে একযোগে দায়িত্ব পালন করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ইভটিজিং এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ইউএনও বলেন, “যখন দেখি একজন মেধাবী শিক্ষার্থী মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে কিংবা সহিংসতায় জড়িয়ে যায়, তখন বুঝি—কোথাও না কোথাও আমাদের সম্মিলিত দায়িত্বে ঘাটতি ছিল।”
তিনি আরও বলেন, “শুধু আইন প্রয়োগ নয়, শিশুদের মনে সচেতনতার বীজ বপন করতে না পারলে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব গড়ে উঠবে না।”
এ সময় কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে ইউএনও বলেন, “বর্তমানে শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তকনির্ভর শিক্ষায় সীমাবদ্ধ থাকলে শিক্ষার্থীরা কেবল চাকরি খুঁজবে, কিন্তু উদ্যোক্তা হয়ে কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারবে না। আত্মনির্ভরতার জন্য প্রয়োজন কারিগরি ও বাস্তবমুখী শিক্ষা।”
তিনি অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান, সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভাবতে গিয়ে যেন কেবল জিপিএ নয়, বাস্তবজ্ঞান ও দক্ষতার বিষয়েও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে ইউএনও বলেন, “২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রত্যাশিত হয়নি—এর দায় কার?” এই প্রশ্নের ভিত্তিতে শুরু হয় ফল বিশ্লেষণ এবং ২০২৬ সালের জন্য শিক্ষাগত রূপরেখা নির্ধারণের আলোচনা।
তিনি বলেন, “সমস্যা চিহ্নিত না করলে সমাধান সম্ভব নয়। আমরা চাই, প্রতিটি স্কুল নিজেদের অবস্থান বিশ্লেষণ করে ঘাটতি কাটিয়ে সফলতা বয়ে আনুক।”
অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন ও সম্মানজনক ফলাফলের জন্য একটি সম্মিলিত অঙ্গীকারে পৌঁছান ইউএনও ও উপস্থিত শিক্ষকবৃন্দ।
একুশে সংবাদ/ব.প্র/এ.জে