মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে থেমে থেমে টানা ভারী বর্ষণে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙায় একাধিক স্থানে পাহাড় ধসে বহু বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রোববার (৩ আগস্ট) মাটিরাঙা পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট ভেঙে চরম জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিনে বৌদ্ধমন্দিরপাড়া, চরপাড়া, চক্রপাড়া, ওয়াসু, মোহাম্মদপুর, মেস্ত্রীপাড়া, বলিপাড়া ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র পাওয়া যায়।
গত এক সপ্তাহ ধরে থেমে থেমে মাঝারি ও ভারী মাত্রার বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি, তবে বসতঘর ও গোয়ালঘর বিধ্বস্ত হয়ে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চলাচলের রাস্তা, ফলে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, গত বর্ষায় বাবুপাড়া এলাকার বৌদ্ধমন্দিরপাড়ার একমাত্র চলাচলের রাস্তা ভেঙে যায়। এলাকাবাসীর উদ্যোগে সাময়িকভাবে চলাচলের উপযোগী করা হলেও পৌরসভা বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা মেরামতের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এবার সেই রাস্তাটি পুরোপুরি ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরপাড়ার বাসিন্দা পাইচাইং মারমা জানান, “গত বছর ধলিয়া খালের স্রোতে পাহাড়ের একাংশ ভেঙে গেছে। এবার গোয়ালঘর পুরোটাই খালে চলে গেছে। এখন একমাত্র থাকার ঘরটি নিয়েও শঙ্কায় আছি। দ্রুত সহায়তা দরকার।”
ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই নিরাপদ স্থানে সরে যেতে পারছেন না। অনেকে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। উপজেলা প্রশাসন থেকে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সতর্কতা প্রচার চালানো হচ্ছে।
পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতিনিধি আলী আশরাফ বলেন, “যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে পাহাড়ধসের শঙ্কা বাড়ছে। অনেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছেন। তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্ষা শেষ হলে ভেঙে যাওয়া রাস্তাগুলোর মেরামত করা হবে।”
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তিনটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার থেকে সহায়তার জন্য আবেদন এসেছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য খাদ্য, চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুর আলম বলেন, “পরিস্থিতি অবনতি ঘটলে আরও সহায়তা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রাণহানির ঝুঁকি এড়াতে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।”
স্থানীয়দের মতে, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে প্রশাসন কিছুটা তৎপর হলেও পরে আর কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। তাই তারা স্থায়ী পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন।
একুশে সংবাদ/খা.প্র/এ.জে