নওগাঁর মান্দা উপজেলার ফেরিঘাট এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) কোটি টাকা মূল্যের জমি দখল করে রেস্টুরেন্ট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে বলা হয়, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সংগঠনের পরিচয়ে রিপন, ফাইম ও সজিব নামের তিন ব্যক্তি এ রেস্টুরেন্টটি গড়ে তুলেছেন।
জানা গেছে, মান্দা ফেরিঘাট ব্রিজের নিচে সওজের জমিতে “মান্দা রিভার কোর্ট” নামে পাকা রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করা হয়। জমি দখলের পর সেখানে জেলা প্রশাসক ও ইউএনও-র নামফলক সংযুক্ত করে রেস্টুরেন্টটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় গত ১৪ জুলাই। উদ্বোধনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উপস্থিত থাকলেও জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়ালের নামফলক ব্যবহার করা হলেও তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, রেস্টুরেন্ট মালিকরা দাবি করছেন তারা জায়গাটি লিজ নিয়েছেন। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, সওজ থেকে এখনো কোনো বৈধ লিজ প্রদান করা হয়নি। আরও জানা গেছে, ফেরিঘাট ব্রিজের সাইড ওয়াল কেটে রেস্টুরেন্টে নামার রাস্তা তৈরি করা হয়েছে, যা নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়ককে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
এ বিষয়ে কথা বললে রেস্টুরেন্টের একজন মালিক রিপন বলেন, “জমিটি লিজের জন্য আবেদন করেছি। সওজ যদি উচ্ছেদ করে, তাহলে আমরা রেস্টুরেন্ট সরিয়ে নেব।” অন্য মালিক ফাইম দাবি করেন, “সড়ক বিভাগের অনুমতি না থাকলে তো আমরা পাকা ঘর করতে পারতাম না। ইউএনও স্যারের সহযোগিতায় উদ্বোধন করেছি।”
রেস্টুরেন্ট উদ্বোধন করেন সাবেক মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ আলম মিয়া। অনুষ্ঠানে মান্দা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ডা. ইকরামুল বারী টিপু, উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মোজাম্মেল হক মুকুল, উপজেলা জামায়াতের আমির ডা. মাওলানা আমিনুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আব্দুর রাকিবসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন এবং পরে নৈশভোজে অংশ নেন।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যান্য নেতারা জানান, এই রেস্টুরেন্ট নির্মাণ সম্পর্কে সংগঠনের কেন্দ্রীয় বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। “সংগঠনের নাম ব্যবহার করে সরকারিভাবে জমি দখলের ঘটনায় আমরা বিব্রত। এতে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।”
এ বিষয়ে মান্দা উপজেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-প্রকৌশলী নূর আলম সিদ্দিক জানান, “ফেরিঘাট সংলগ্ন জমি লিজ দেওয়া হয়নি। রেস্টুরেন্ট নির্মাণ অবৈধ। আমরা সার্ভেয়ার পাঠিয়ে জমির পরিমাপ করব এবং প্রয়োজনে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে উচ্ছেদের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
নওগাঁ জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল বলেন, “রেস্টুরেন্ট উদ্বোধনে আমার নাম ব্যবহার করা হয়েছে—এটি আমার জানা ছিল না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”
একুশে সংবাদ/ন.প্র/এ.জে