AB Bank
  • ঢাকা
  • রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

কালাইয়ে আলুর ভাড়া কমাতে আন্দোলন, অনড় হিমাগার মালিকরা


Ekushey Sangbad
আব্দুল্লাহ সউদ, কালাই, জয়পুরহাট
০৪:৫২ পিএম, ১৩ জুলাই, ২০২৫

কালাইয়ে আলুর ভাড়া কমাতে আন্দোলন, অনড় হিমাগার মালিকরা

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় চলতি মৌসুমে আলু চাষে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা চরম সংকটে পড়েছেন। বাজারে আলুর দরপতন, উৎপাদন খরচের ঊর্ধ্বগতি এবং হিমাগারে সংরক্ষণ ভাড়ার অযৌক্তিক বৃদ্ধিতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন হাজারো চাষি ও ব্যবসায়ী।

মৌসুমের শুরুতে ন্যায্য দাম না পেয়ে অনেকে আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করেছিলেন লাভের আশায়। তবে এখন সেই আলু উত্তোলনের সময় এসে হিমাগার মালিকদের ধার্যকৃত অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। গত এক সপ্তাহ ধরে তারা আন্দোলন, মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করলেও হিমাগার মালিকরা ভাড়া কমাতে নারাজ। ফলে কৃষকদের মধ্যে তীব্র হতাশা বিরাজ করছে।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জয়পুরহাট জেলায় ৪৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৯ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন। অতিরিক্ত উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় বাজারে আলুর দাম গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। বর্তমানে পাইকারি বাজারে ৬৫ কেজির একটি বস্তা আলু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায়।

গত বছর যেখানে ৬৫ কেজির বস্তায় হিমাগার ভাড়া ছিল ৩৫০ টাকা, এবার তা বেড়ে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। যদিও প্রতি কেজিতে ভাড়া সামান্য কমিয়ে ৬.৭৫ টাকা করা হয়েছে, তবুও বস্তাপ্রতি গড়ে ৫০-৬০ টাকা অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা।

চাষিদের অভিযোগ, হিমাগার মালিকরা একতরফাভাবে ভাড়া নির্ধারণ করছেন। তারা কৃষকদের আলু দেখিয়ে ব্যাংক থেকে কম সুদে ঋণ নিয়ে আবার বেশি সুদে সেই অর্থ কৃষকদের দিচ্ছেন, যাতে কৃষকরা তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসেন।

উৎপাদন খরচ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এক কেজি আলু উৎপাদনে খরচ হচ্ছে ১৭-১৮ টাকা, হিমাগার ভাড়া ৬.৭৫ টাকা এবং বস্তা, সুতলি, লেবার, পরিবহনসহ মোট খরচ দাঁড়াচ্ছে প্রতি কেজিতে ২৭ টাকারও বেশি। অথচ হিমাগার থেকে আলু বিক্রি করতে গিয়ে কৃষকরা পাচ্ছেন মাত্র ১১-১২ টাকা কেজি। ফলে প্রতি বস্তায় গড়ে সাড়ে ৩০০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

আলু ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, “ঋণ আর সুদের বোঝা নিয়ে আমরা ধুঁকছি। এই বাড়তি ভাড়া আমাদের আরও বিপদে ফেলেছে।”

২৯ জুন জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়ক এবং ৩০ জুন মোসলেমগঞ্জ-কিচক আঞ্চলিক সড়কে চাষি ও ব্যবসায়ীরা অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। প্রশাসন আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত হিমাগার মালিকরা ৪০০-৪২০ টাকার ভাড়া নিয়েই চলেছেন।

কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহান বলেন, “হিমাগার মালিকদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। তারা ৩৭০ টাকা ভাড়া নেওয়ার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে।”

আলু রপ্তানিকারক হংফং কোম্পানির প্রতিনিধি আব্দুল বাসেদ জানান, “রপ্তানিও এখন প্রায় বন্ধ। গত বছর যেখানে সরকার ২০ শতাংশ প্রণোদনা দিত, এবার তা কমে ১০ শতাংশ হয়েছে।”

জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, “গত বছর এই সময়ে আলু বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে। এবার ১২-১৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাহেলা পারভিন বলেন, “হিমাগার মালিকরা কেজিপ্রতি এক-দেড় টাকা কমালে কৃষকরা কিছুটা রেহাই পেতেন। এই ক্ষতি শুধু আর্থিক নয়, মানসিক ও সামাজিক প্রভাবও ফেলছে।”

অন্যদিকে, বৃহত্তর বগুড়া কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ ও আর.বি স্পেশালাইজ হিমাগারের মালিক প্রদীপ কুমার প্রসাদ বলেন, “আমরা ভাড়া নিয়েছি বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। চাষি ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন।”

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. এম আসাদুজ্জামান সরকার মনে করেন, “এই সংকট থেকে উত্তরণে সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন। পরিকল্পনার অভাব ও বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা কৃষকদের প্রতি বছর এমন সংকটে ফেলছে।”

তিনি আরও বলেন, “যদি পরিকল্পিতভাবে চাষ নির্ধারণ ও বাজার ব্যবস্থাপনা না করা হয়, তাহলে কৃষকরা ভবিষ্যতে আলু চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।”

 

একুশে সংবাদ/জ.প্র/এ.জে

সর্বোচ্চ পঠিত - সারাবাংলা

Link copied!