AB Bank
  • ঢাকা
  • রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩৬টি স্থানে ভাঙন, এবার ক্ষতি কোটি টাকার ওপরে


Ekushey Sangbad
জেলা প্রতিনিধি, ফেণী
১০:৪৬ এএম, ১৩ জুলাই, ২০২৫

ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩৬টি স্থানে ভাঙন, এবার ক্ষতি কোটি টাকার ওপরে

গত বছরের ভয়াবহ বন্যার ক্ষত না শুকাতেই আবারও পানিতে তলিয়ে গেছে ফেনীর বিভিন্ন জনপদ। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩৬টি পয়েন্টে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

শনিবার (১২ জুলাই) বাঁধ ভাঙনের চার দিন পর এ তথ্য নিশ্চিত করেছে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বছরের পর বছর একই দুর্ভোগ পোহাতে হলেও সঠিক পদক্ষেপ নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এর আগে টানা বৃষ্টি আর ভারতের পাহাড়ি ঢলে গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) জেলার সীমান্তবর্তী পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। যদিও ধীরে ধীরে এসব এলাকার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞার কিছু অংশ এখনও পানির নিচে রয়েছে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গেই দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ভোগের চিত্র।

পাউবো জানিয়েছে, এবার মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধে পরশুরামে ১৯টি এবং ফুলগাজীতে ১৭টিসহ মোট ৩৬টি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। শুরুতে চারদিন ধরে পাউবো ২০টি স্থানের ভাঙনের তথ্য দিয়েছিল।

স্থানীয়দের দাবি, গত বছরও এই তিন নদীর বাঁধ শতাধিক স্থানে ভেঙে গিয়েছিল। পরে ২০ কোটির বেশি টাকা ব্যয়ে বাঁধ মেরামত করা হলেও বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ফের ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, অনিয়ম আর দায়সারা কাজের কারণেই প্রতিবছর এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, বাঁধ ভাঙনের ফলে পরশুরাম ও ফুলগাজীর বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে পরে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার কিছু অংশে। প্লাবিত হয়েছে অন্তত ১১২টি গ্রাম, বিপাকে পড়েছেন লাখো মানুষ। আশ্রয় নিয়েছেন ৮৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার মানুষ।

কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এবারের বন্যায় মৎস্য খাতে ক্ষতি ৮ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, কৃষিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫ হাজার ৫৬৪ দশমিক ৬১ হেক্টর ফসলি জমি এবং প্রাণিসম্পদে ক্ষতির পরিমাণ ৬৪ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫০ টাকা। সম্পূর্ণ পানি নেমে গেলে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

ফুলগাজীর কমুয়া এলাকার খামারি মো. হারুন জানান, গেল বছর অন্তত ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছিল। এবারও মুরগির খামার পানিতে তলিয়ে গেছে, মাছের ঘের ভেসে গেছে। প্রতিবছর একইভাবে বাঁধ ভাঙে, পানি ঢুকে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়। প্রতিবারই শুধু আশ্বাস মেলে।

ছাগলনাইয়ার মহামায়া এলাকার বাসিন্দা ফরিদা সুলতানা বলেন, পানি কিছুটা কমেছে, তবে ঘরের আসবাবপত্র সব নষ্ট হয়ে গেছে। আগাম কোনো সতর্কবার্তা মেলে না। পরিকল্পিত নদী শাসন ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড শুধু দোষ চাপায় বৃষ্টি আর উজানের পানির ঘাড়ে। কবে যে এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলবে, জানা নেই।

পরশুরামের অলকা এলাকার বাসিন্দা মাসুম বলেন, চারদিন পার হলেও পাউবোর কোনো কর্মকর্তাকে চোখে পড়েনি। প্রতিবছর তারা বাঁধ ভাঙন আর নতুন বরাদ্দের অপেক্ষায় থাকে। এবার টেকসই বাঁধের দাবিতে আমরা আন্দোলন গড়ে তুলব।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, এবার সরেজমিন ঘুরে ভাঙনের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আগে শুধু এলাকা ধরে তথ্য ছিল। পানি নেমে যাওয়ার পর ভাঙা বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হবে।

জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, ত্রাণ কার্যক্রমে ইতোমধ্যে ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরও ৪০ লাখ টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে শুকনো খাবার, গো-খাদ্য ও শিশু খাদ্যের জন্য। সেনাবাহিনীও ত্রাণ তৎপরতায় সহায়তা করছে। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গেল বছরের জুলাই-আগস্টে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ফেনী ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। সে বন্যায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৯ জন। সড়ক, শিক্ষা, ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ সর্বক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়ে গিয়েছিল শত কোটি টাকা।

 


একুশে সংবাদ/ঢ.প/এ.জে

সর্বোচ্চ পঠিত - সারাবাংলা

Link copied!