চলমান সকল ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, সহিংসতা ও পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকে ব্যবসায়ী সোহাগকে পাথর মেরে নৃশংস হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। ওই ঘটনার প্রতিবাদে ঝালকাঠি জেলা জুড়ে ভিন্ন ভিন্ন ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল করেছে । গতকাল শুক্রবার ও আজ শনিবার জেলার ঝালকাঠি সদর, নলছিটি ও রাজাপুর উপজেলায় বিভিন্ন ব্যানারে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়।
শনিবার (১২ জুলাই) সকাল ১১ টায় ঝালকাঠি শহরের ফায়ার সার্ভিস মোড় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাব চত্বরে এসে বিক্ষোভ সমাবেশে করে।

এ সময় বক্তব্য রাখেন, রাইয়ান বিন কামাল, ইয়াসিন ফেরদৌস ইফতি, শাহরিয়ার দিপু, লিমা ও স্বর্ণা।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঝালকাঠি শাখার সদস্য সচিব রাইয়ান বিন কামাল বলেন, নিরাপত্তাহীনতার এই চিত্র কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একের পর এক মানুষ হত্যার ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না।’ এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দ্রুত বিচার কার্যক্রম শুরুর আহ্বান জানান তিনি।
এ কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
অন্যদিকে বিকেলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর ঝালকাঠি জেলা শাখার ব্যানারে ঝালকাঠি কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি জেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
এ সময় বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের জেলা সহ সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাওলানা আহসান উল্লাহ খান, শাখাওয়াত হোসেন, সেক্রেটারী হাফেজ মাওলানা ইব্রাহীম আল হাদী, যুব আন্দোলন বাংলাদেশ ঝালকাঠি জেলা সভাপতি মাওলানা মিজানুর রহমান প্রমুখ।
এদিকে বিকেলে নলছিটিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর নলছিটি উপজেলা শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে রাজাপুরে শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ-এর রাজাপুর উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দরা শহরের বাইপাস মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে রাজাপুর প্রেসক্লাব চত্বরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, হেদায়েতুল্লাহ ফয়জী, মাও. ইব্রাহিম আল হাদী, মাও. হেমায়েত উদ্দিন, মাও. মিজানুর রহমান, মাস্টার জাহিদুল ইসলাম, ইব্রাহিম খলিল, মাও. কবির হোসেন ও মফিজুর রহমান।
এদিকে আজ শনিবার (১১ জুলাই) রাজাপুর উপজেলার ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ-এর ৪ নং গালুয়া ইউনিয়ন শাখার উদ্যোগে গালুয়া বাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে, ইউনিয়নের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে।
এসব বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে বক্তারা বলেন, ব্যবসায়ী হত্যাকারীর খুনি ছিল যুবদল। বাংলাদেশে স্পষ্টভাবে দলের নাম ধরে সমালোচনা করা শিখতে হবে। যদি তা না পারেন তাহলে সকলে আবার হাসিনা হয়ে উঠতে চাইবে। প্রত্যেকে আওয়ামী লীগ হয়ে উঠতে চাইবে। নতুন বাংলাদেশে জুলাই যতদিন বেঁচে থাকবে, আমরা কোনোভাবে কাউকে আওয়ামী লীগ হয়ে উঠতে দিব না। সেটা বিএনপি, জামায়াত কিংবা অন্য রাজনৈতিক দল হোক। কোনোভাবে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ কায়েম হতে দিব না।
তারা আরও বলেন, বর্বরোচিত সকল হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রকাশ্যে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে হবে। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সকল প্রকার চাঁদাবাজি ও দলীয় সন্ত্রাস বন্ধ করতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সাধারণ জনতার জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও আদর্শভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় সরকার গঠনের লক্ষে পি আর পদ্ধতীতে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।
উল্লেখ্য: গত ৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটসংলগ্ন রজনী ঘোষ লেনে লাল চাঁদকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় শুক্রবার (১১ জুলাই)। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ৪ -৫ জন যুবক মিলে রাস্তায় ফেলে এক ব্যক্তির মাথায় উপর্যুপরি বড় পাথর দিয়ে আঘাত করছে। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
একুশে সংবাদ/ঝা.প্র/এ.জে