টানা চার দিনের ভারী বর্ষণে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কৃষি ও মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জলাবদ্ধতায় তলিয়ে গেছে বীজতলা, সবজি ক্ষেত ও মাছের ঘের। হুমকির মুখে পড়েছে মুরগির খামারগুলোও।
গত সোমবার থেকে টানা বৃষ্টির ফলে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। উপজেলার খাল ও নদীগুলোর পানির উচ্চতা স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১–২ ফুট বেড়ে যাওয়ায় ফসলি জমি ও বসতবাড়ি প্লাবিত হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, রোপা আমন বীজতলা: ১,২০২ হেক্টরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৪০ হেক্টর, রোপা আউশ ধান: ২,৮২১ হেক্টরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ৮৪৬ হেক্টর, সবজি ক্ষেত: ২৫০ হেক্টরের মধ্যে ১৮৮ হেক্টর ক্ষতির মুখে, পান বরজ: ৩৮ হেক্টর, কলা ১৭ হেক্টর, পেপে ১০ হেক্টরসহ অন্যান্য ফলন ক্ষতির আশঙ্কায়, মাছের ঘের: আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ২০০ জনের বেশি মৎস্যচাষি ।
উপজেলার দাসপাড়া ইউনিয়নের খামারি মো. রিপন জানান, তিনি প্রায় ৩ একর জমিতে মাছ ও মুরগির খামার পরিচালনা করছেন। বর্ষার পানিতে একাধিক পুকুর তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে কৈ মাছের ঘের থেকে মাছ বেরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তাকে রাতভর পাহারা দিতে হচ্ছে। ঘেরের পাড় উঁচু করা ও জাল দিয়ে মাছ আটকানোর চেষ্টা চলছে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় বাউফলে প্রতিবছর প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ হয়। তবে চলতি মৌসুমে বৃষ্টির অভাব ও হঠাৎ ভারি বর্ষণে বীজতলা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে আমন মৌসুমে বীজ সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
বর্ষণে উপজেলার অন্তত ২০০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেক জায়গায় গ্রামের রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় চলাচল বন্ধ রয়েছে। কোথাও কোথাও ভাঙনও দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মিলন বলেন,“বৃষ্টির পানি না নামা পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত পরিমাণ বলা যাচ্ছে না। তবে বীজতলার ক্ষতি সবচেয়ে বেশি। ফলে আমন মৌসুমে বীজ সংকট দেখা দিতে পারে।”
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান ঝান্টা বলেন,“বৃষ্টি চলমান থাকায় ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত হিসাব এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে অনেক মৎস্য চাষি আমাদের ক্ষতির তথ্য দিয়েছেন।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম জানান,“চরাঞ্চলীয় ৮টি ইউনিয়নের (চন্দ্রদ্বীপ, কালাইয়া, কেশবপুর, ধুলিয়া, কাছিপাড়া, নওমালা ও বগা) ফসল, বীজতলা, গাছপালা ও মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টি থামলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে যথাযথ ত্রাণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।”
একুশে সংবাদ/প.প্র/এ.জে