নোয়াখালী জেলায় টানা ২৪ ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতে আবারও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। জেলা শহর মাইজদীসহ সদর ও আশপাশের উপজেলাগুলোর বিভিন্ন নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর সমান পানি জমে রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, সদর, বেগমগঞ্জ, সেনবাগ, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর ও চাটখিল উপজেলায় কাঁচা ও আধা-পাকা রাস্তাগুলো ডুবে যাওয়ায় পথচারী ও যানবাহন চালকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো— যেমন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, মৎস্য অফিস, জেলা খানা সড়ক, পাঁচ রাস্তার মোড়, পৌর বাজার—পানিতে ডুবে আছে।
বৃষ্টির কারণে অনেক বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে। অফিসগামী লোকজন, বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিপাকে পড়েছেন। স্কুলে যাওয়ার পথে একাধিক শিশু জলকাদায় পড়ে আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে দোকানপাটও বন্ধ রয়েছে অনেক জায়গায়।
জেলা শহরের বাসিন্দা আবু সাইদ নোমান অভিযোগ করে বলেন, “বছরের পর বছর ধরে জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাবে সামান্য বৃষ্টিতেই এ দুর্ভোগ পোহাতে হয়।”
মাইজদীর আরেক বাসিন্দা আবু তাহের জানান, “বৃষ্টির পর দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও রিকশা বা অটোরিকশা পাইনি। রাস্তায় পানি জমে থাকায় কেউ আসতে চায় না। অফিসে পৌঁছাতে ভোগান্তির সীমা নেই।”
সুবর্ণচরের বাসিন্দা মাইন উদ্দিন বলেন, “জলাবদ্ধতার কারণ হচ্ছে খালের সঠিক খনন না হওয়া এবং কোথাও কোথাও বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখা। পরিকল্পনার অভাবই এই দুর্দশার মূল কারণ। নেতার অভাব নেই, কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ নেই।”
জেলা আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ১৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আরও ভারি বৃষ্টি হতে পারে, যা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে জানান আবহাওয়াবিদ মো. রফিকুল ইসলাম।
এ বিষয়ে নোয়াখালী পৌর প্রশাসক জালাল উদ্দীন বলেন, “টানা বৃষ্টির কারণে স্বাভাবিকভাবেই জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পানি দ্রুত সরাতে পৌরসভার পক্ষ থেকে কাজ শুরু হয়েছে।”
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ জানান, “কিছু রাস্তা ডুবে গেলেও প্রধান সড়কগুলোতে জলাবদ্ধতা হয়নি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জনগণের সহযোগিতা ছাড়া এই সমস্যা সমাধান কঠিন।”
একুশে সংবাদ/ঢ.প/এ.জে