“ফুফু, আমাকে বাঁচাও”—এই হৃদয়বিদারক আর্তনাদ স্তব্ধ করে দেয় পুরো এলাকা। শোকের নিস্তব্ধতায় ডুবে আছে দুইটি পরিবার। ব্রহ্মপুত্র নদের নির্মম স্রোতে হারিয়ে গেল তিনটি শিশুর প্রাণ। পরিবার ও এলাকাবাসীর বুকফাটা কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে চরআলগী গ্রাম।
মঙ্গলবার সকালে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকাডুবিতে একই গ্রামের তিন মাদ্রাসাছাত্র-ছাত্রীর মৃত্যু হয়। পরীক্ষা দিতে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন—শাপলা আক্তার (১৪), আবির (৭), ও জুবায়েদ (৮)। তিনজনই চরআলগী গ্রামের বাসিন্দা এবং গফরগাঁও উপজেলার বিরই নদীরপাড় দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। শাপলা ও আবির সম্পর্কে ছিলেন ফুফু-ভাতিজা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওইদিন সকালে নয়জন শিক্ষার্থী একটি ছোট নৌকায় নদ পার হচ্ছিল। মাঝনদীতে গিয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। ছয়জন সাঁতরে তীরে উঠলেও নিখোঁজ হয় তিনজন। কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযানে নামে। প্রথম দিন শাপলার মরদেহ এবং পরদিন বাকি দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
শোকাহত হাবিব মিয়া বলেন, "ব্রহ্মপুত্র নদ ছাড়া চলার আর কোনো উপায় নেই। প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে শিশু শিক্ষার্থীরা নদ পার হয়। এমন দুর্ঘটনায় আমরা বাকরুদ্ধ।” গ্রামের আরেক বাসিন্দা এমদাদুল মিয়া বলেন, "তিনটি ছোট প্রাণ হারিয়ে গেল, দুইটি পরিবার যেন অন্ধকারে ডুবে গেছে। তাদের কান্না সহ্য করা যাচ্ছে না।"
ফিরোজ আশরাফ শান্ত জানান, “প্রতি বছরই কেউ না কেউ নদে ডুবে মারা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই সেতুর দাবি জানিয়ে আসছি। আর কত প্রাণ গেলে সাড়া দেবে প্রশাসন?”
পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, "একই গ্রামের তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু আমাদের ব্যথিত করেছে। উপজেলা প্রশাসন তাদের পরিবারের পাশে রয়েছে এবং সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।"
একুশে সংবাদ/কি.প্র/এ.জে