নওগাঁর মান্দায় মুসলিম গৃহবধূকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে আটক শ্রী সন্তোষ মন্ডল ওরফে সন্টু নামে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক যুবককে জেল হাজতে (শ্রীঘরে) পাঠিয়েছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে তাকে।
এর আগে রোববার রাতে উপজেলার ভাঁরশো ইউনিয়নের রাজেন্দ্রবাটী গ্রামে তাকে আপত্তিকর অবস্থায় আটকের পর পুলিশে সোপর্দ করেন স্থানীয়রা। আটককৃত শ্রী সন্তোষ মন্ডল ওরফে সন্টু (৪৯) উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের বিল করিল্যা গ্রামের সুধান্ন চন্দ্র মন্ডলের ছেলে।
মামলার এজাহারসূত্রে জানা গেছে, বাদী একজন গৃহিনী। বাদীর স্বামী কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। বাদিনীর বসত বাড়ীর পাশে আসামীর জমি জায়গা আছে। আসামী জমি জায়গা দেখতে গিয়ে বাদিনীকে বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে কু-প্রস্তাব দিতো। বাদী ও তার স্বামী আসামীকে এহেন কার্য থেকে বিরত থাকার জন্য নিষেধ করেন। বাদিনী আসামীর কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় উক্ত আসামী বাদীর ক্ষতি করার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। এরই এক পর্যায়ে ২৯ জুন রাত ৮ টার দিকে বাদী ও তার স্বামী রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে ঘরে শুয়ে পড়েন। এরপর একইদিন রাত ১০ টার দিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিলে বাদী ঘর থেকে বাহির হয়ে টয়লেট যান এবং টয়লেট থেকে বাহির হয়ে ঘরে যাওয়ার পথে বাদিনীর বসত বাড়ীর আঙ্গিনায় গেলে উক্ত আসামী বাদিনীকে পিছন থেকে ঝাপটে ধরে তার পরিহিত মেক্সির সামনে ছিড়ে ফেলে ও শরীরের স্পর্শ কাতর স্থানে হাত দিয়ে মাটিতে শুয়াইয়া মেক্সি উপরে দিকে তুলে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষনের চেষ্টা করে।
এমতাবস্থায় বাদিনী ডাকচিৎকার দিলে তার স্বামীসহ আরো অনেকে এগিয়ে এসে বাদীকে উদ্ধার করে এবং আসামীকে ধরে আটকিয়ে রাখে। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হয়ে আসামীকে গণধোলাই দেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে যাওয়ায় স্থানীয় লোকজন জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ ফোন দিলে থানা পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে যান। এসময় প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ লোকজনের উপস্থিত ছিলেন। এসময় আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে ঘটনার বিষয় স্বীকার করেন। এরপর আসামীকে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে।
মামলাটি প্রাথমিক তদন্তকালে পুলিশ জানায়, আটককৃত আসামী একজন খারাপ প্রকৃতির লোক। সে ইতোপূর্বে অত্র মামলার বাদিনী ছাড়াও বিভিন্ন লোকের সাথে খারাপ কাজের প্রস্তাব দেন। মর্মে স্থানীয় ভাবে জানা যায়। আসামীর এই স্বভাব-চরিত্রের কারণে এবং আসামী হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক হওয়ার পরেও মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকের বাড়ীতে ঢুকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক ভাবে সমালচনা ও উত্তেজনা সৃষ্টি করে। মামলাটি তদন্তাধীন। উক্ত আসামী জামিনে মুক্তি পেলে মামলা তদন্তে বিঘ্নসহ আসামী চিরতরে ভারতে পালিয়ে যাওয়াসহ যে কোন বড় ধরণের বি-শৃঙ্খলা ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি আসামীকে যে খানে পাবে সেখানে তাকে ধরে মারপিট করবে বলে এলাকার লোকজন বলাবলি করতেছে মর্মে জানা যায়। এমতাবস্থায় মামলাটি সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে, মামলা তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত উক্ত আসামীকে জেল হাজতে আটক রাখা প্রয়োজন। অথচ, একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা করেন। কিন্ত থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে তারা ব্যার্থ হন।
মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনসুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় ভূক্তভোগী গৃহবধূ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯ (৪) (খ) ধারায় থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-৩২। তার দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে আটককৃত আসামীকে আজ সোমবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে (শ্রীঘরে) পাঠানো হয়েছে। নারী ঘটিত স্পর্শকাতর কোন বিষয়ে কেউ মব সৃষ্টি করে বাণিজ্য করতে চাইলে অথবা আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দিলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
একুশে সংবাদ/ন.প্র/এ.জে
একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
