AB Bank
  • ঢাকা
  • সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পেয়ে ইতিহাস গড়েছেন চা শ্রমিক পরিবারের সন্তান



ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পেয়ে ইতিহাস গড়েছেন চা শ্রমিক পরিবারের সন্তান

দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাবিতে পড়ার স্বপ্ন ছিল চা শ্রমিক পরিবারের সন্তান ইতি গৌড়ের। সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল চা বাগানের ছোট একটি টিলার ঘরে চা শ্রমিক পরিবারে বেড়ে ওঠা ইতি গৌড়  দীর্ঘ সংগ্রাম ও প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদেও ফিন্যান্স বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়ে ইতিহাস গড়েছেন। 

তিন বোনের মধ্যে ছোট এই মেয়েটিই এলাকার প্রথম শিক্ষার্থী হিসেবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলেন। তার এই অর্জনে গোটা বাগানে বইছে আনন্দের ঢেউ।

ইতি কুলাউড়ার বরমচাল মিশনারি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষার যাত্রা শুরু করে বরমচাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে ৪.৬৭ ও ইউছুফ গণি কলেজ থেকে এইচএসসিতে ৪.৮৩ জিপিএ অর্জন করেন। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর, শাহজালাল ও ঢাবির মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শেষ পর্যন্ত ইতি বেছে নিয়েছেন তার স্বপ্নের গন্তব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগ। ইতি জানান, একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। জাহাঙ্গীরনগরে অপেক্ষমান তালিকায় এবং জগন্নাথে ব্যর্থতা তাকে খানিকটা নাড়িয়ে দিয়েছল। এরপর শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে ভর্তি হলেও ঢাবির ফলাফলে সুযোগ পেয়ে নিজের সিদ্ধান্ত বদলে ঢাকাতেই নতুন যাত্রা শুরু করেন।

ইতির জীবনের গল্প কেবল একটি শিক্ষার্থীর সাফল্য নয়; এটি লড়াই, ত্যাগ ও স্বপ্নের গল্প। মা সুমিত্রা গৌড় ছিলেন চা শ্রমিক। তিনি দুই বছর আগে অসুস্থ হয়ে মারা যান। বাবা শংকর গৌড় বাপেক্সে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে চাকরি করলেও ২০১৮ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চাকরি হারান। বর্তমানে তিনিও অসুস্থ এবং কর্মক্ষম নন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ইতি বলেন, আগে ভালোভাবে লেখাপড়া শেষ করতে চাই। ভালো রেজাল্ট হলে চাকরি পাওয়া কঠিন হবে না। ফিন্যান্সের পড়া শেষ করে চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (সিএ) হওয়ার ইচ্ছা আছে। তার মতে, ভালো রেজাল্টই তাকে স্বপ্নপূরণে সহায়তা করবে। মেয়ের এ সাফল্যে আবেগাপ্লুত বাবা শংকর গৌড় বলেন, বাংলাদেশ  পেট্টোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডে (বাপেক্স) চাকরির সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অনেক স্যারদের দেখতাম, ভাবতাম যদি আমাদের মেয়েও এমন হতে পারত! আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ইতির সফলতার খবর ছড়িয়ে পড়তেই বরমচাল চা বাগানে তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। অনেকেই আর্থিক সহায়তা ও উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। চা বাগানভিত্তিক শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলো তার পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে। ইতি শুধু একটি পরিবারের নয়, বরং একটি সম্প্রদায়ের অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

এদিকে মেধাবী ছাত্রী ইতি গৌড়কে গতকাল রবিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা ও আর্থিক পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার এম. কে. এইচ. জাহাঙ্গীর হোসেন জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ইতিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে শুভেচ্ছা জানান, মিষ্টিমুখ করান এবং তার সাফল্যের জন্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আর্থিক পুরস্কার তুলে দেন।

পুলিশ সুপার বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার স্বপ্ন বাংলাদেশে সবাই দেখে, তবে পরিশ্রমী ও মেধাবীরাই সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে। চা-বাগানের সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যেও ইতি যেভাবে  রমধা ও অধ্যবসায়ে সাফল্য অর্জন করেছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।

তিনি আরও বলেন, জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আমরা তার সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপ কিছু অর্থ পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছি। ইতি গৌড় ভবিষ্যতে দেশ-বিদেশে সাফল্য অর্জন করে মৌলভীবাজারের নাম উজ্জ্বল করবে। চা বাগানের অন্য ছেলেমেয়েরাও ইতি গৌড়ের মতো এগিয়ে যাবে সেই কামনা করি। ইতির পিতা শংকর গৌড় এই সম্মাননা ও সহযোগিতার জন্য জেলা পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং মেয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেছেন।

 

একুশে সংবাদ/মৌ.প্র/এ.জে

Link copied!