AB Bank
  • ঢাকা
  • শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

পাখির সঙ্গে কোটচাঁদপুরে হোটেল ব্যবসায়ীর সখ্যতা



পাখির সঙ্গে কোটচাঁদপুরে হোটেল ব্যবসায়ীর সখ্যতা

খাবারের সন্ধানে প্রতিদিন উড়ে আসে শত শত পাখি। আর স্নেহভরে তাদের খাবার দেন হোটেল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী শেখ। এভাবেই গড়ে উঠেছে পাখির সঙ্গে তার এক অদ্ভুত সখ্যতা—যা চলে আসছে দীর্ঘ ৯ বছর ধরে। পাখির প্রতি ভালোবাসা থেকেই তাদের খাবার দেওয়া শুরু করেছিলেন তিনি।

মোহাম্মদ আলী শেখ (৫৫), পেশায় একজন হোটেল ব্যবসায়ী। কোটচাঁদপুর পৌর শহরের মেইন বাজারে পুরাতন কলেজ হোস্টেলের সামনে অবস্থিত ‘মমতা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’-এর মালিক তিনি। ২১ বছর ধরে হোটেল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, আর গত ৯ বছর ধরে পাখিদের নিয়মিত খাবার দিয়ে আসছেন।
সকাল সাড়ে ৬টা। কোটচাঁদপুর বাজারের সড়কে পা রেখেই শোনা যাচ্ছিল পাখিদের কিচিরমিচির ডাক। হোটেলের সামনে ও আশপাশের ভবনের টিনের চাল, বৈদ্যুতিক তারে বসে আছে অসংখ্য শালিক পাখি। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাতে বড় এক ঢেক (বাটি) নিয়ে হোটেল থেকে বের হন মোহাম্মদ আলী শেখ। ঢেকের খাবার ছিটিয়ে দেন পাশের দোকানের ছাদে। মুহূর্তেই শত শত পাখি নেমে এসে শুরু করে খাবার খাওয়া। এই দৃশ্য দেখে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি, শুনতে থাকেন তাদের ডাক।

প্রতিবেদকের প্রশ্নে মোহাম্মদ আলী শেখ বলেন, “প্রথমে কয়েকটা পাখি আসত। এখন তা ৫-৬ শ’র মতো। সারাদিনের ব্যবসা শেষে অবশিষ্ট খাবার জমিয়ে রাখি। পরদিন সকালে পাখিদের খাওয়াই। এতে দৈনিক গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা ব্যয় হয়।”

তিনি আরও বলেন, “যেদিন হোটেল বন্ধ থাকে বা খাবার কিছু অবশিষ্ট থাকে না, সেদিন পরোটা বানিয়ে খাওয়াতে হয়, আবার কখনো পাশের দোকান থেকে পাউরুটি কিনে দিই। তাদের ডাক শুনতে আমার ভালো লাগে। কখন যে ভালোবাসা গড়ে উঠেছে, বুঝতেই পারিনি।”

প্রতিদিন খাবার দেওয়ার নিয়ম এতটাই স্থায়ী যে, মোহাম্মদ আলী শেখ না থাকলে হোটেলের কর্মীরা দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, “আমার অনুপস্থিতিতে হোটেলের সবাই জানে, পাখিদের খাবার দিতে হবে।”

মোহাম্মদ আলী শেখ কোটচাঁদপুর পৌরসভার সলেমানপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক।

মমতা হোটেলের কর্মচারী ফরিদ হোসেন বলেন, “আমি ১৬ বছর ধরে এখানে কাজ করছি। গত ৯ বছর ধরে তিনি পাখিদের খাবার দিচ্ছেন। আগে পাখি কম আসত, এখন অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে শীতকালে বেশি পাখি আসে।”

কোটচাঁদপুর উপজেলার বন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, “খবর পেয়ে আমি পাখিগুলো দেখতে গিয়েছিলাম। এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় কাজ। তিনি যে ভালোবাসা থেকে এটি করছেন, তা অনুকরণীয়। তবে কেউ যদি খারাপ উদ্দেশ্যে এমন কিছু করেন, সেক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে
প্রকৃতির সঙ্গে মানুষ যখন মিতালি গড়ে তোলে, তখন তা হয়ে ওঠে এক অনন্য উদাহরণ। মোহাম্মদ আলী শেখের এই নিঃস্বার্থ সেবা শুধু পাখিদেরই নয়, বরং সমাজকেও এক মানবিক বার্তা দিচ্ছে—ভালোবাসা বিনিময়ের জন্য ভাষার প্রয়োজন হয় না, প্রয়োজন হয় মন থেকে দেওয়া ছোট্ট একটি খাবারই।

 

একুশে সংবাদ/ঝি.প্র/এ.জে

Link copied!