সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় এক নারী কর্মচারীর বিরুদ্ধে একই সময়ে দুইটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করে বছরের পর বছর সরকারি বেতন-ভাতা ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। তথ্য গোপন ও স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে প্রায় এক যুগ ধরে এ অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
অভিযুক্ত সারমিন ইয়াসমিন নাসরিন বেলকুচি মডেল ডিগ্রি কলেজে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে কর্মরত থাকলেও, একই সময় তিনি স্থানীয় সোহাগপুর নৃতনপাড়া আলহাজ সিদ্দিক উচ্চ বিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে ৫ হাজার টাকা করে নিয়মিত বেতন গ্রহণ করছেন।
জানা গেছে, নাসরিন বেলকুচি মডেল ডিগ্রি কলেজে নিয়োগ পান তাঁর আত্মীয়, তৎকালীন অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নানের মেয়াদে। নিয়োগের পর থেকেই তিনি নিয়মিত হাজির না থেকেও সরকারি বেতন-ভাতা গ্রহণ করে আসছেন। কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীরা বিষয়টি জানলেও অধ্যক্ষের প্রভাবের কারণে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি।
২০২৪ সালের শেষ দিকে অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান অবসর নেওয়ার পর কলেজ প্রশাসনের নথিপত্র ও হাজিরা খাতা পর্যালোচনার মাধ্যমে একে একে এসব অনিয়ম সামনে আসতে শুরু করে।
বেলকুচি মডেল ডিগ্রি কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. শামীম হোসেন বলেন, "সারমিন ইয়াসমিন নাসরিন দীর্ঘদিন অনুপস্থিত রয়েছেন। ২০২৪ সালের ২১ ডিসেম্বর কলেজ সভাপতির আহ্বানে একটি অফিস আদেশ জারি করে শিক্ষক-কর্মচারীদের মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয় এবং বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। হাজিরা খাতায় তাঁর নাম থাকলেও স্বাক্ষরের ঘর খালি থাকত।"
তিনি আরও বলেন, "আমি সদ্য দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। পূর্ববর্তী প্রশাসনের অনিয়ম সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত ছিলাম না। এখন বিষয়টি অফিসিয়ালি সামনে এসেছে, দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
সারমিন ইয়াসমিন নাসরিন অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, "আমার বাবা দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমি দান করেছেন। সেই সুবাদে আমি কিছুটা সুযোগ পেয়েছি। ডিগ্রি কলেজের পাশাপাশি অন্য প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছি—এতে দোষের কিছু দেখি না। শিক্ষক সংকট থাকায় আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।"
তিনি আরও বলেন, "হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর না দিলেও অন্য শিক্ষকরা আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। আমি জেনে-বুঝে ভুল করিনি, জানলে হয়তো করতাম না।"
সোহাগপুর নৃতনপাড়া আলহাজ সিদ্দিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, "নাসরিন দীর্ঘদিন ধরে ৫ হাজার টাকা বেতনে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে এখানে দায়িত্ব পালন করছেন। আমাদের প্রতিষ্ঠানে আরও অনেকে খণ্ডকালীন শিক্ষক আছেন। বিস্তারিত জানতে হলে অফিসে আসতে হবে।"
বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফিয়া সুলতানা কেয়া বলেন, "এই অভিযোগ আগে পাইনি, তবে বিষয়টি গুরুতর। আমি নতুন কর্মস্থলে বদলি হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দ্রুত তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করব।"
সিরাজগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আফসার আলী বলেন, "একজন কর্মচারী একই সময়ে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারেন না। এটি সম্পূর্ণ বেআইনি। বিষয়টি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
তিনি আরও বলেন, "এ ধরনের অনিয়ম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ও নৈতিকতা নষ্ট করে। শিক্ষা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকবে।"
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (শিক্ষা ও কল্যাণ শাখা) ফারজানা রহমান তন্বী বলেন, "কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে সরকারি অর্থ গ্রহণ করা দুর্নীতির শামিল। এটি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বার্থে সরাসরি আঘাত। আমি বিষয়টি প্রথম আপনার মাধ্যমেই জানতে পারলাম। জেলা প্রশাসন এ নিয়ে দ্রুত তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।"
একুশে সংবাদ/সি.প্র/এ.জে