ঢাকার ধামরাইয়ে নিজ বাড়ি থেকে এক নারী ও তার দুই শিশুসন্তানের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার (২ জুন) বিকেল তিনটার দিকে ধামরাই উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের রক্ষিত গ্রামে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন—রক্ষিত গ্রামের মৃত রাজা মিয়ার স্ত্রী নারগিস আক্তার (৪২), তার বড় ছেলে মো. শামীম (১৭) ও ছোট ছেলে সোলাইমান (৮)।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিকভাবে বিষক্রিয়াজনিত কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এটি আত্মহত্যা না কি পরিকল্পিত হত্যা—তা নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। নিহতদের দেহে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে খাওয়া ভাত ও ডিমভাজি জব্দ করেছে পুলিশ।
নিহত নারগিসের মেয়ে নাসরিন বেগম বলেন, “বাড়িতে এসে দেখি সব দরজা-জানালা বন্ধ। বাইরে থেকে দরজা খুলে দেখি ঘরের ফ্যান চলছে। মা শুয়ে আছেন ভেবে কাছে গিয়ে বসি। পা ছুঁয়ে দেখি একেবারে শক্ত হয়ে গেছে। পরে কাঁথা সরিয়ে দেখি দুই ভাইও মায়ের পাশেই শুয়ে। মা`কে জড়িয়ে ধরি, দেখি আর নিঃশ্বাস নেই।”
নাসরিন জানান, তিনি শ্বশুরবাড়িতে থাকেন এবং ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানেন না।
নিহতের শ্বশুর জালাল উদ্দিন বলেন, “নাতনি ফোন করেও মাকে পাচ্ছিল না। পরে বাড়িতে এসে দরজা খুলে দেখে সবাই মারা গেছে। পরিবারের কারও সঙ্গে কোনো ঝগড়া বা বিবাদ ছিল না।”
তবে নারগিসের মা রাশেদা বেগম ও ছোট বোন কাজলী আক্তার অভিযোগ করেন, বাড়ি ও জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। নারগিসকে বাড়ি ছাড়ার হুমকিও দেওয়া হচ্ছিল। কাজলী বলেন, “আমার বইনের শ্বশুর-শাশুড়িই ওদের মেরে ফেলেছে। তারা আর দুই প্রতিবেশীই ছিল একমাত্র শত্রু। শেষমেশ বাড়ির জন্যই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।”
ঢাকা জেলা পুলিশের সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীনুর কবির বলেন, “খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। দেখি বিছানায় মা ও দুই ছেলের নিথর দেহ পড়ে আছে। শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই এবং ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। নিহত নারীর মেয়ে বাইরে থেকে দরজা খুলে মরদেহ দেখতে পান।”
তিনি আরও জানান, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। তবে এটি আত্মহত্যা না কি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, তা নিশ্চিত হতে হলে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।”
মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
একই পরিবারের তিনজনের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় পুরো গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের মানুষ নারগিসের বাড়িতে ভিড় করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, “এটা একেবারেই অস্বাভাবিক ও দুঃখজনক। ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে—একই সঙ্গে তিনজন মানুষ এভাবে মারা গেলেন।”
আরেক প্রতিবেশী হাসি আক্তার বলেন, “প্রথমে শুনলাম ছেলে মারা গেছে, পরে ছোট ছেলেটা, তারপর শুনি মা—তিনজনই আর নেই। জানালা দিয়ে দেখি সবাই বিছানায় নিথর পড়ে আছে। খুব ভালো মানুষ ছিলেন তারা। এক বছর আগে স্বামী মারা যান। কেন এমন হলো, কিছুই বুঝতে পারছি না।”
একুশে সংবাদ / ঢা.প্র/এ.জে