মাছের প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের জলজ সম্পদ সংরক্ষণে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ বনবিভাগ। ১ জুন ২০২৫ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরই মধ্যে জেলেদের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশের সব ধরনের পাশ ও পারমিট ২৫ মে থেকে স্থগিত করা হয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ এই বনাঞ্চলে রয়েছে দুই শতাধিক নদী ও খাল। বনবিভাগের তথ্য মতে, সুন্দরবনের জলজ পরিবেশে বিচরণ করে প্রায় ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি এবং ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া। এই প্রাণিগুলোর প্রজনন মৌসুম মূলত জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত। ফলে এই সময়টিতে মাছ ধরা বন্ধ রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও মৎস্য প্রজাতির টিকে থাকার জন্য প্রজনন মৌসুমে জলজ প্রাণীদের নিরবচ্ছিন্ন প্রজনন নিশ্চিত করতে হবে। কেউ যদি এই সময় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সুন্দরবনে প্রবেশ করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে, করমজল বন্যপ্রাণী ও প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানান, ‘নদী-খালে বিষ প্রয়োগ কিংবা জাল দিয়ে নির্বিচারে মাছ ধরার ফলে শুধু মাছের ক্ষতি হয় না, এতে গোটা জলজ বাস্তুতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ে। তাই এবার মনিটরিং আরও জোরদার করা হবে।’
পরিবেশবিদরাও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘যথাসময়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়াটা প্রশংসনীয়। তবে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় তদারকি আরও বাড়াতে হবে। ’
তবে এই নিষেধাজ্ঞায় সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ২০ হাজার জেলের জীবিকা কিছুটা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, এসব জেলেকে দু’দফায় ৮০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাময়িক এই নিষেধাজ্ঞার ফলে দীর্ঘমেয়াদে সুন্দরবনের মৎস্যসম্পদ পুনরুদ্ধার হবে এবং সমুদ্র ও উপকূলীয় অর্থনীতি লাভবান হবে।
একুশে সংবাদ / বা.প্র/এ.জে