ময়মনসিংহের গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে এক নারী যাত্রীকে অপহরণ করে বখাটেরা।
এ সময় ঔই নারী যাত্রীর প্রেমিককে শারীরিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার (১০ মে) ভোরে রেলওয়ে ফাঁড়ি পুলিশ অভিযান চালিয়ে অপহরণের ৫ ঘণ্ট পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলার একটি কক্ষ থেকে ওই নারী যাত্রীকে উদ্ধার করে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ৪ জনকে আটক করেছে।
এর আগে রাতে প্লাটফর্মে ওই নারী যাত্রী ও তার প্রেমিককে জিজ্ঞাসাবাদসহ মারধরের ঘটনা চলে প্রায় দেড় ঘণ্ট। ৪০গজ দূরে নিরাপত্তা কর্মীর অফিস ও ৬০ গজ দূরে রেলওয়ে ফাঁড়ির অফিস থাকলেও তারা কেউ এ ঘটনায় এগিয়ে আসেননি।
আটকরা হলেন রামগোপালপুর ইউনিয়নের গঙ্গাশ্রমের মৃত আহাম্মদ আলীর পুত্র খোকন মিয়া (৩০), পৌর শহরের নতুন বাজারের সুরুজ মিয়ার পুত্র মো. রাব্বি মিয়া (২০), দেলোয়ার হোসেনের পুত্র রায়হান উদ্দিন (২১) ও বারহাট্টা উপজেলার স্বল্প আন্দাদিয়া গ্রামের মো. ইয়াকুব আলীর পুত্র মো. আনোয়ার হোসেন।
নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার স্বল্প আন্দাদিয়া গ্রামের মো. ইয়াকুব আলীর পুত্র মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, তিনি বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক। এরপরেও ধিরাই উপজেলার ষোড়শী কন্যার সাথে প্রেমের সম্পর্ক হয়। তাকে নিয়ে ট্রেনে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য গৌরীপুর জংশনে রাতে আসেন। তারা স্টেশনে পৌঁছার ৫মিনিট পূর্বে ট্রেনটি স্টেশন ত্যাগ করেন। এরপরে তার প্রেমিকাকে নিয়ে স্টেশন প্লাটফরমের মুসাফিরখানায় অপেক্ষা করছিলেন। রাতে স্টেশনের বখাটে খোকন মিয়া এসে এ জুটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
একপর্যায়ে তাকে মারধর করে স্টেশনে তাকে খোকনের সঙ্গীয় রাব্বি ও রায়হান আটকে রাখে । আনোয়ার বলেন, আমি ওদের পায়ে ধরেছি, এরপরেও কিলঘুষি মেরেছে। আর বখাটে সর্দার খোকন মিয়া রাত সাড়ে ৩টার দিকে স্টেশন থেকে মেয়েটাকে নিয়ে যায়। এরপরে আমি বিষয়টি পুলিশ ফাঁড়িতে এসে জানাই।
বখাটে খোকন মিয়া জানান, তিনি স্টেশনে বৈশাখী হোটেলে রাত দেড়টায় এসেছিলেন নাস্তা করতে। পরে স্টেশনে ঘুরতে এসে দেখেন ছেলে-মেয়ে একসাথে বসা। মেয়েটার স্পর্শকাতর স্থানে ছেলেটি (প্রেমিক) হাত দিচ্ছে। তা দেখে ছেলে-মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদে স্বামী-স্ত্রী দাবি করলে তার সন্দেহ হয়। একপর্যায়ে মেয়েটি স্বীকার করে ছেলেটা তার স্বামী নয়, প্রেমের সম্পর্কে তারা বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছেন। এতে তিনি ওই মেয়ের বাবাকে কল দেন এবং মেয়েটিকে তার হেফাজতে রাখার অনুরোধ জানান। সেই অনুরোধে তিনি মেয়েটিকে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে খোকন দাবি করেন। স্টেশনের ফাঁড়ি পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীদের না জানিয়ে মেয়েটাকে নিয়ে যাওয়া তার ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেন খোকন।
মেয়েটা জানায়, আনোয়ার হোসেনের সাথে প্রেমের সম্পর্কে গৌরীপুর এসেছিলেন। স্টেশনে রাতে দুজন বসেছিলেন তখন দু-তিন জন বখাটে এসে আনোয়ারকে মারধর করে। আমাকে সেখান থেকে নিয়ে যায় অন্য স্থানে। শ্লীলতাহানির চেষ্টা করলেও তারা পারে নাই।
গৌরীপুর রেলওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ সাবইন্সপেক্টর আবুল কালাম জানান, গৌরীপুর হাসপাতাল থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে স্টেশনে নিয়ে আসি। স্টেশনে অপেক্ষমাণ যাত্রীকে শারীরিক নির্যাতন ও নারী যাত্রীকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ৪ জনকে আটক করা হয়েছে।
তাদেরকে ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানায় আনা হয়েছে। মেয়েটির বাবাও এসেছেন। মেয়েটিও তার বাবার সাথে চলে যেতে ইচ্ছুক।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একুশে সংবাদ/ম.প্র/এ.জে