দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র তিন দিন বাকি। ফরিদপুর-৪` আসনে ২ হেভিওয়েট প্রার্থীর মরণপণ লড়াই শুরু হয়েছে। কাজী জাফর উল্লাহ নৌকা পুণরুদ্ধারে মরিয়া অন্যদিকে নিক্সন চৌধুরী তৃতীয় বারের মত এবারও চান হ্যাটট্রিক করতে। দুই জনই অনড় অবস্থানে। সবার দৃষ্টি এখন ফরিদপুরের ভাঙ্গায়।
কাজী জাফর উল্লাহ আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারক সভাপতি মন্ডলীর ছয় বারের মেম্বার ও আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী কো-চেয়ারম্যান তথা প্রধানমন্ত্রীর পরের স্থান, তিনি দলের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। অন্যদিকে দুই দুই বারের স্বতন্ত্র সাংসদ, প্রধানমন্ত্রীর ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের বর্তমান প্রেসিডিয়াম মেম্বার মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। তিনি এবার নৌকার নমিনেশন কিনে না পেয়ে দলের ড্যামী প্রার্থী হয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে তৃতীয় বারের মতো লড়ছেন। এবার তার মার্কা ঈগল পাখি।
দুই প্রার্থীই নির্বাচনী মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন। দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রকার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। ভোটারদের মন জয় করতে যার যার পরিবারের লোকজনদেরও ভোটের মাঠে নামিয়েছেন। কাজী জাফর উল্লাহর জন্য তার সহধর্মিনী সাবেক এমপি স্থপতি নিলুফার জাফরউল্লাহ তিনি দিনে রাতে একাধিক উঠান বৈঠক করে স্বামীর জন্য ভোট প্রার্থনা করছেন। তিনি মহিলাদের মাঝে বেশ সাড়া জাগিয়ে তুলেছেন।
অন্যদিকে নিক্সন চৌধুরী তার কিশোরী কন্যা নাজোরা মুজিব চৌধুরী বাবার জন্য ঘরে ঘরে গিয়ে লিফলেট বিতরণের মধ্য দিয়ে ভোট চাইছেন। তিনি নতুন ভোটারদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছেন।
তবে সাধারণ ভোটারদের মন্তব্য এবারের লড়াই খুব জমে উঠেছে। এই দুই হেবিওয়েট প্রার্থীর মাঝে এবারের লড়াই হবে খুবই হাড্ডাহাড্ডি বলে মনে করছেন ভোটাররা।
দুই নেতাই সারা দেশের মধ্যে এই ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর- চরভদ্রাসন) আসনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ভোটারদের উপস্থিতি ব্যাপক হারে ঘটানোর জন্য।
এ আসনে বিএনপি জামাতের কোন প্রভাব নাই বললেই চলে। ভোটারদের মাঝেও ভোটের ইমেজ জোরেশোরেই বৈইতে শুরু করেছে। মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে ভোটারদের আনাগোনা। এবারের লড়াই অস্তিত্ব টিকে থাকার লড়াই বলে মনে করছেন উভয়ে দলের সমর্থকরা। আসনটি স্বাধীনতার পর থেকেই নৌকা অধ্যুষিত এলাকা। এ আসন থেকে কাজী জাফর উল্লাহর চাচা ডাঃ কাজী আবু ইউসুফ তিন বারের এমপি ছিলেন, তার সহধর্মিনীও এক বার এমপি ছিলেন, কাজী জাফর উল্লাহ তিনিও একবার এমপি ছিলেন। ২০১৪ সাল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিক্সন চৌধুরী টানা দুইবার এমপি হয়েছেন। এবারও তিনি ধরে রাখতে মরণপণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
কাজী জাফর উল্লাহ তিনিও তার পরিবারের সম্মান ফিরে পেতে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট চাচ্ছেন।
এবারের লড়াই চ্যালেঞ্জের লড়াই, এবারের লড়াই অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই বলে ভাবছেন উভয় প্রার্থী।
অনেক সচেতন ভোটাররা তাদের মুখ খুলছেন না কোন প্রার্থীকে ভোট দিবেন। তবে সাধারণ ভোটাররা হিসাব নিকাশ কষেই তাদের ভোট প্রয়োগ করবেন।
এদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনী দলের কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, এ আসনের জনগণ বিগত দশ বছর ধরে নিষ্পেষিত ও অবহেলিত ছিল, যার ফলে তারা আবার জেগে উঠেছে নৌকায় ভোট দিতে, এখানে গণ-জোয়ার শুরু হয়ে গেছে, খুবই সাড়া পাচ্ছি ভোটারদের মাঝে, আমি শতভাগ আশাবাদী নৌকার বিজয় হবে ইনশাআল্লাহ।
অন্যদিকে দিকে বাংলাদেশ যুবলীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন বলেন, এই আসনের জনগণ ২০১৪ সালে আমাকে না দেখে বিজয় করেছেন, ২০১৮ সালে আমার উন্নয়ন দেখে বিজয় করেছেন, এবার ২০২৪ সালে উন্নয়ন ও মূল্যায়নে আমাকে বিজয় করবেন।আমি যা উন্নয়ন করেছি বিগত চল্লিশ বছরেও হয়নি। আমি ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি ভোটারদের মাঝে। আমি শতভাগ আশাবাদী এবার জনগণ আমাকে বিজয় করে হ্যাটট্রিক করবেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৪ এর বিষয়ে ভাঙ্গা উপজেলার নবাগত সহকারি রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বি এম কুদরত-এ খুদা স্পষ্ট জানিয়েছেন , আমার ভাঙ্গা উপজেলায় সকল প্রকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে থাকবে। নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার মাধ্যমে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বিঘ্নে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। আমরা মনে করছি দুই হেভিওয়েট প্রার্থী থাকায় এখানে সর্বোচ্চ ভোট কাস্টিং হবে।
এদিকে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হাসান উদ্দিন জানান, ভাঙ্গা উপজেলায় একটি পৌরসভা ও বারটি ইউনিয়ন রয়েছে। কেন্দ্র রয়েছে ৯৯ টি,ভোট কক্ষের সংখ্যা ৪৯০ টি, পুরুষ ভোটারের সংখ্যা-এক লক্ষ বিশ হাজার ২৪৫,মহিলা ভোটার সংখ্যা- এক লক্ষ তের হাজার, হিজড়া ভোটার-তিন, মোট ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ৩৩ হাজার ২৪৮ ভোট।
একুশে সংবাদ/চ.ট.প্র/জাহা