AB Bank
  • ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর, ২০২৫, ১৮ কার্তিক ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসক নেই, ভরসার হাসপাতাল নিজেই রোগী



শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসক নেই, ভরসার হাসপাতাল নিজেই রোগী

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। একমাত্র সরকারি হাসপাতালে নেই প্রয়োজনীয় জনবল। প্রয়োজনের তুলনায় সহায়ক কর্মীসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংখ্যা কম, এবং বিভিন্ন পদে কর্মচারী সংকট বিরাজ করছে।

উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩ লাখ জনসংখ্যার চিকিৎসা সেবার প্রধান ভরসা এই হাসপাতালটি নানা সমস্যার কারণে আজ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। চিকিৎসক ও জনবল নিয়োগ না থাকায় স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। চিকিৎসক ও জনবল নিয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবার মানোন্নয়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০ শয্যা থাকলেও পর্যাপ্ত অবকাঠামো নির্মাণ বা চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রদান করা হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে জনবল নিয়োগ নেই। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে রোগীদের দীর্ঘ লাইন, কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নেই। এতে রোগীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

সিন্দুরখান ইউনিয়নের সাইটুলা গ্রামের আক্তার হোসেন সোমবার (৩ নভেম্বর) বলেন, “টিকিট কেটে ২ ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। আরও কতক্ষণ সময় লাগবে, বলতে পারছি না। এইভাবে গরমের মধ্যে গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিতে আসলে রোগ কমবে না বরং আরও বাড়বে।”

রাজঘাট চা বাগানের সুকেন তাতী বলেন, “আমার এলার্জি সমস্যা। হাসপাতালে এসে জানতে পারলাম, দীর্ঘদিন ধরে এখানে চর্ম বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই।”

অন্যান্য রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। চিকিৎসকের ঘাটতি মেটাতে সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররা প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করছেন।

শহরতলীর মুসলিমবাগ এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল হোসেন বলেন, “আমার স্ত্রী অন্তঃসত্তা। গতকাল বিকেলে হাসপাতালে ভর্তি করলাম। রাতে জানতে পারি, সপ্তাহে একদিন গাইনি ডাক্তার এখানে সিজারিয়ান অপারেশন করেন। আমরা গরিব, প্রাইভেটে ডাক্তার দেখানোর টাকা নেই। বাধ্য হয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে ভর্তি করতে হয়েছে।”

একাধিক রোগীর স্বজন জানিয়েছেন, জরুরি বিভাগে চিকিৎসা ছাড়া সারাদিনে কোনো চিকিৎসক রোগীর কাছে যান না। সরকারি এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নেই বললেই চলে। জরুরি মুহূর্তে রোগীর চিকিৎসা সেবায় ডাক্তার পাওয়া যায় না। কিছু সময় সিনিয়র সেবিকারাও রোগীর কাছে যান না এবং একবারের বেশি ডাকলে রূঢ় আচরণ করেন। তারা শিক্ষানবিশ সেবিকাদের দিয়ে কাজ চালান।

হাসপাতালের একাধিক স্টাফ জানান, সার্জন ও গাইনি চিকিৎসক নিয়মিত না থাকায় অন্তঃসত্তা নারীরা ঘুরে যান। চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা রোগীর তুলনায় কম হওয়ায় তারা অত্যন্ত চাপের মধ্যে আছেন। জরুরি বিভাগেও সেবা নিতে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরিবর্তে জরুরি বিভাগে আসা রোগীদের প্রেসক্রিপশন লিখছেন হাসপাতালের ডেন্টাল সার্জন, নার্সিং সুপারভাইজার ও স্যাকমো। মেডিকেল অফিসারের পদ ফাঁকা থাকায় মাঝে মাঝে তাদের দায়িত্বও পালন করতে হচ্ছে। এতে সচেতন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

ভুক্তভোগীরা বলেন, চিকিৎসকসহ অন্যান্য পদ শূন্য থাকায় রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন না। অনেক রোগীকে বাধ্য হয়ে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করতে হয়। উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারকে দিয়ে ইমার্জেন্সি ডিউটি করানো এবং চিকিৎসক সংকটের কারণে উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রেও তৃণমূল স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালের ১২টি কনসালটেন্ট পদে এখনও ৮টি শূন্য রয়েছে। এছাড়া জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলোজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (নাক-কান), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (ফিজিক্যাল মেডিসিন), মেডিকেল অফিসার/সহকারী সার্জন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও), মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (এসআই, রেডিওগ্রাফি, ফিজিওথেরাপি), পরিসংখ্যানবিদ, হেলথ এডুকেটর, কম্পিউটার অপারেটর, কার্ডিওগ্রাফার, অফিস সহকারী কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য সহকারী, অফিস সহায়ক, ওয়ার্ড বয়, বাবুর্চি ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ বহু পদ শূন্য রয়েছে।

এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সিনথিয়া তাসমিন বলেন, “৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় প্রচুর চাপ পড়ছে। চিকিৎসক সংকট থাকায় ডাক্তার ও নার্সরা হিমশিম খাচ্ছেন, সাধারণ রোগীরাও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। জেনারেটর থাকলেও তেলের অভাবে বিদ্যুৎ চলে গেলে সমস্যায় পড়তে হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার চিঠি পাঠিয়েছি। দায়িত্ব পালন না করলে তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন (পদোন্নতিপ্রাপ্ত উপপরিচালক) মো. মামুনুর রহমান বলেন, “শ্রীমঙ্গল নয়, প্রতিটি হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবল বাড়ানোর জন্য কয়েক দফা চিঠি দিয়েছি। অল্প জনবল দিয়ে সেবা দেওয়া কঠিন। আশা করছি চলতি মাসে প্রতিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিছু চিকিৎসক দেওয়া হবে এবং ডিসেম্বরের আগেই চিকিৎসক ও জনবল সংকট দূর হবে।”

 

একুশে সংবাদ/এ.জে

সর্বোচ্চ পঠিত - সারাবাংলা

Link copied!