AB Bank
ঢাকা মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ত্রিশালে ৩০ অবৈধ ইউ-টার্নে যাত্রীদের যেন মৃত্যুফাঁদ!


Ekushey Sangbad
একুশে সংবাদ ডেস্ক
১১:৩৯ এএম, ১৯ অক্টোবর, ২০২৩
ত্রিশালে ৩০ অবৈধ ইউ-টার্নে যাত্রীদের যেন মৃত্যুফাঁদ!

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ত্রিশাল উপজেলার বগামারী থেকে বগারবাজার পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার। এটুকু পথে আছে ৩০টির বেশি অবৈধ ইউ টার্ন। এসব ইউ টার্নের বেশির ভাগই পাঁচটি এলাকায়। এর একটি চেলেরঘাট। গত বুধবার সেখানে বেপরোয়া এক বাসের চাপায় ছয়জন পোশাককর্মীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে গত তিন বছরে মহাসড়কের এই অংশে ৫০ টির বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

অবৈধ ইউ টার্ন ছাড়াও মহাসড়কের পাশে যত্রতত্র বাস-ট্রাক রাখা এবং উল্টো পথে তিন চাকার যান চলাচলকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বলে মনে করছে স্থানীয় লোকজন। তারা বলছে, এসব ইউ টার্নে যখন-তখন গাড়ি ঘুরছে। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। আবার ময়মনসিংহ শহর থেকে ভালুকার নাসির গ্লাস পর্যন্ত মহাসড়কের আশপাশে কোনো বাসস্ট্যান্ড নেই। পুরো মহাসড়কে যত্রতত্র বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন রাখা হচ্ছে। এতে সড়ক সরু হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে মহাসড়কে উল্টো পথে তিন চাকার (থ্রি-হুইলার) বিভিন্ন অবৈধ যান চলছে। মূলত এসব কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনার পর থানায় হওয়া মামলাগুলোর নথি ঘেঁটে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল অংশে বেশ কিছু এলাকা চিহ্নিত করা হয়, যেখানে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে চেলেরঘাট, বইলর (বড় পুকুরপার), কাজীর সিমলা, রাগামারা, সাইনবোর্ড অন্যতম।

এসব এলাকায় দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে দেখা যায়, বেশির ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে অবৈধভাবে চার লেন সড়কের বিভাজক (ডিভাইডার) কেটে বানানো ইউ টার্নে রাস্তা পারাপার ও গাড়ি মোড় নেওয়া সময়। বগারবাজার থেকে বগামারী পর্যন্ত সড়ক ও জনপথের ডিভাইডারের অন্তত ৩০ জায়গায় কাটা রয়েছে। মহাসড়কের এই অংশগুলো তুলনামূলক বেশি বাঁকা হওয়ায় এখানে বেপরোয়া গতির গাড়িগুলো ওভারটেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে। বাঁকা সড়ক ও ডিভাইডারে বড় গাছের কারণে অনেক সময় অবৈধ ইউ টার্ন দিয়ে ঢোকা গাড়ি দেখা যায় না। এতে দুই গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হচ্ছে। কখনো গাড়ির চাপায় পথচারী মারা যাচ্ছে।

অবৈধ ডিভাইডার বন্ধের ব্যাপারে ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী সাদ্দাম হোসেন সংবাদ প্রতিদিনকে, বলেন,স্থানীয় লোকজন তাদের প্রয়োজনমতো কিছুদিন পর পর ডিভাইডার ভেঙে চলাচলের রাস্তা বের করে। আমরা কিছুদিন পর পর এগুলো বন্ধ করে দিলেও আবারও ভেঙে ফেলে। এরই মধ্যে আমি জেলার ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে বিষয়টি জানিয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব অবৈধ রাস্তা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। উপজেলার বাগান এলাকার জোবায়ের হোসেন বলেন, নওধার জিরো পয়েন্ট থেকে বগারবাজার সীমানা পর্যন্ত মহাসড়কের অনেক স্থানে অবৈধভাবে ডিভাইডার কেটে ইউ টার্নের মতো বানিয়েছের স্থানীয় সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরযানের চালকরা। এসব কাটা স্থান দিয়ে চলাচলের সময় উল্টো দিক থেকে আসা গাড়িগুলো দেখা যায় না। এতে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে।

স্থানীয় বাসচালক মজিবুর রহমান বলেন,মহাসড়কে অবৈধ থ্রি-হুইলার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যানের কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। তা ছাড়া ডিভাইডার কোটে বানানো সরু জায়গা দিয়ে গাড়ি চলাচলের সময় গাছপালার কারণে বড় গাড়ি দেখা যায় না। এতে দুর্ঘটনার বড় ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। অটোরিকশার এক চালক বলেন,মহাসড়কে বৈধ পারাপারের জায়গা অনেক দূরে দূরে। এ জন্য সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস নিতে উল্টো দিকে আসতে হয়। তা ছাড়া আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেই মহাসড়কে গাড়ি চালাই।

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, চেলেরঘাটের দুর্ঘটনার আগে গত সোমবার উপজেলার বইলরে মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা দুজন পোশাক শ্রমিককে চাপা দেয় একটি পিকআপ। গত ২ ফেব্রুয়ারি বইলরে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে আরেকটি ট্রাক ধাক্কা দিলে দুজন মারা যায়। গত বছরের ১৬ জুলাই গাড়িচাপায় অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ তিনজন নিহত হয়। একই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি কাজির সিমলায় বিকল ট্রাকের পেছনে সজোরে ধাক্কা খায় যাত্রীবাহী বাস। এতে একটি শিশুর মৃত্যু হয়। শিশুটির মায়ের এক পা কেটে ফেলতে হয়।(২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে সজোরে ধাক্কা খায় বাস। ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়। একই বছরের ১৬ অক্টোবর চেলেরঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে যাত্রীবাহী বাস সজোরে ধাক্কা খায়। ঘটনাস্থলেই বাসের সাতজন নিহত হয়। একই বছরের ১৪ আগস্ট দাঁড়িয়ে থাকা সিমেন্টভর্তি একটি ট্রাকের পেছনে যাত্রীবাহী বাস ধাক্কা দেয়। এতে পাঁচজন নিহত হয়। এই বছরের ২০ জুন রাতে কাভার্ড ভ্যানের চাপায় তিনজন নিহত হয়। এভাবে তিন বছরে অর্ধশতাধিক দুর্ঘটনা ঘটে। ত্রিশাল থানার পুলিশ বলছে, গত তিন বছরে উপজেলায় বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ৩০টির বেশি মামলা করা হয়েছে। এসব ঘটনায় শতাধিক মানুষ হতাহত হয়েছে। তবে স্থানীয় লোকজন বলছে, বাস্তবে দুর্ঘটনার সংখ্যা ৫০-এর বেশি। মৃত্যুর সংখ্যা আরো বেশি। ভুক্তভোগীরা থানায় মামলা না করায় মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা জানা যায় না।

নিরাপদ সড়ক চাই’ সংগঠনের ত্রিশাল উপজেলার সাবেক সভাপতি খোরশিদুল আলম মজিব বলেন, মহাসড়কের বগামারী থেকে বগারবাজার অংশের দুর্ঘটনাগুলোর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমরা বেশ কিছু সমস্যা পেয়েছি। এর মধ্যে আছে অদক্ষ চালক দিয়ে ফিটনেসবিহীন গাড়ির যথেচ্ছ চলাচল। এ ছাড়া মহাসড়কে তিন চাকার সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিষিদ্ধ। অথচ এসব যান উল্টো পথে মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। স্থানীয় ভ্যানচালক, রিকশাচালক ও যাত্রীরা তাদের সুবিধামতো সড়ক বিভাজক (ডিভাইডার) কেটে ৩০টির বেশি ইউ টার্ন বানিয়েছে। এসব ইউ টার্ন এখন মারণফাঁদ। 

 

একুশে সংবাদ/বি এইচ

Link copied!