বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও তিস্তার নির্দয় ভাঙন খেলা থামেনি। রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট জেলার তিস্তা, ধরলা, দুধকুমারসহ জেলার অন্যান্য নদ-নদীগুলোতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর কড়াল গ্রাসে বার বার বসতঘর সরিয়ে যাযাবর জীবন কাটছে তিস্তা পাড়ের মানুষের।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) সকাল ৯টায় ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টের বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার এবং কাউনিয়ায় ব্যারেজ পয়েন্টের ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি কমলেও বিঘার পর বিঘা জমি ও বসতভিটা খেয়ে এগোচ্ছে তিস্তা। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদী পাড়ের মানুষ।
বানভাসীরা জানান, একদিকে নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে তাদের ভিটেমাটি। অন্যদিকে বন্যায় ভেসে যাচ্ছে সর্বস্ব। তাই তাদের রাত কাটে নির্ঘুম। বর্ষা আসে বর্ষা চলে যায়। কিন্তু তিস্তার করাল গ্রাসে তাদের সব হারানোর আর্তনাদ থামে না। তাই অসহায় নদীপাড়ের মানুষের চাওয়া, নদী খনন করে নাব্য ফিরিয়ে এনে নদী শাসনের ব্যবস্থা করা।
রংপুরের গঙাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের ইকারচলি চড়ের বাসিন্দা কামাল জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে তিস্তার ভাঙন আমার ঘরের কাছে চলে এসেছে। রক্ষা পাওয়ার উপায় নাই। দুটি ঘর সরিয়েছি। বাকি ঘরও সরিয়ে নিতে হচ্ছে। বার বার ঘর সরিয়ে যাযাবরের জীবন কাটাচ্ছি আমরা।
তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান বলেন, ভারতের হুট করে এক তরফা সিদ্ধান্তে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের মানুষের বাড়িঘর আবাদি জমি সবকিছু বিলীন হয়ে যায়। ভারত বন্ধু প্রতিম দেশ। তিস্তা মহাপরিকলপনা বাস্তবায়ন হলে ভারতে এই পানি আমরা উপহার হিসেবে গ্রহণ করবো।
তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন ছাড়া এ ধরনের সংকট থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে হবে। নয়তো তিস্তাপাড়ের মানুষের দুর্ভোগের সীমা পরিসীমা থাকবে না।
এদিকে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর সার্কেল-১ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব বলেন, তিস্তার ২৫০ কিলোমিটার দুই তীরে ১১১ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে। রংপুর সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতির কাজ প্রক্রিয়াধীন।
শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে মৃত প্রায় তিস্তা বর্ষায় আগ্রাসী হয়ে ওঠে। তখন তিস্তা পাড়ের মানুষ ঘরবাড়ি, ফসল আর জমি হারানোর শঙ্কায় দিন কাটান। এ বছর নবমবারের মতো পানিবন্দি নদী পাড়ের অসহায় মানুষ।
একুশে সংবাদ/ন.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :