ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব, আর মিলনের মুহূর্ত। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে ঈদ উদযাপনের ধরন ও ধারা। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে ঈদ ঘিরে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়, তাতে প্রযুক্তি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, এবং আধুনিক জীবনের ছাপ স্পষ্ট।
কেউ ব্যস্ত সেলফি তোলায়, কেউ বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডায়, আবার কেউ পরিবার নিয়ে শহরের বাইরে ঈদ উদযাপন করতে পছন্দ করে। এ প্রজন্মের কাছে ঈদ কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে আত্মপ্রকাশ, আনন্দ ভাগাভাগি আর সামাজিক সংযোগের এক গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ। অনেকেই বাড়ি যেতে পারছে না। যারা যেতে পারেনি তারা ঢাকায় থেকে ঈদ উদযাপন করবে। তাদের ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে জবি প্রশাসন ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সহযোগিতায় ক্যাম্পাসে ঈদের আয়োজনে কোরবানি দেয়ার জন্য থাকছে ৪০ টি গরু।
এবার আসুন আমরা শুনে আসি জবি শিক্ষার্থীদের ঈদ নিয়ে কি ভাবনা, তারা কি ভাবছে ঈদ নিয়ে। কিভাবে তারা ঈদ উদযাপন করবে। এই বিষয় উপস্থাপন করতে আমি সৃজন সাহা আছি আপনাদের সাথে। তুলে ধরবো তাদের ভাবনা। শুরু করা যাক:
ঈদ নিয়ে জবি শিক্ষার্থী মিনহাজ শেখ বলেন, "ঈদ আমার কাছে শুধুই উৎসব নয়, বরং আত্মার পরিশুদ্ধি ও সম্পর্কের পুনর্জন্মের এক মহা মুহূর্ত। দীর্ঘ আত্মসংযমের শেষে এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—মানবতাই সর্বোচ্চ পরিচয়। ইদের প্রকৃত সৌন্দর্য খুঁজে পাই যখন কোলাকুলিতে গলে যায় মনোমালিন্য, আর দানের হাতে, ক্ষমার চোখে ও ভালোবাসার আলিঙ্গনে জেগে ওঠে এক নতুন মানবিক সকাল।"
জবি শিক্ষার্থী কেয়ারুল ইসলাম বলেন, "ঈদ প্রতিবারের মতোই বয়ে নিয়ে আসে আনন্দ উল্লাস আর খুশির ছড়াছড়ি। ঈদ মানে যেমন আনন্দ সেই সাথে ঈদ হচ্ছে আপনজনদের কাছে টানার সুযোগ।যেমন পরিবার ছেড়ে দূরে থাকা প্রত্যেকটি মানুষ তার পরিবারের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে এবং কুরবানীর ঈদে আনন্দটা বেড়ে যায়। কুরবানীর ঈদে সবার বাড়িতে একই রকম খাবারের আয়োজন করা হয় এমন সুন্দর ব্যপার কখনো চাইলেও আর কখনো হয় না।"
জবি শিক্ষার্থী রিয়াতুল ইসলাম রাব্বি বলেন, "ঈদুল আযহা মানেই শুধু কোরবানি নয়, বরং আত্মত্যাগের এক গভীর শিক্ষা। এই ঈদে আমি চাই আমার আচরণ, সময় আর ভালোবাসাও যেন অন্যদের জন্য উৎসর্গ করতে পারি। পরিবার ও প্রিয়জনদের সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তে যেন মমতা থাকে।"
জবি শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ উদ্দিনের ভাবনা, "ঢাকা শহরের যান্ত্রিকতায় নির্মল আনন্দ যেন ভুলতে বসেছি আমরা। তবুও ঈদের আনন্দ একটু হলেও সেই যান্ত্রিকতাকে ভুলিয়ে দিয়ে কিছুটা সময় আত্মীয়, প্রতিবেশীর সাথে কাটানোর সুযোগ করে দেয়। বিশেষত জীবের সাথে কিছু সময় কাটানোর আনন্দ থেকে আমরা ঢাকা শহরের মানুষেরা অনেকাংশে বঞ্চিত। ঈদুল আযহা আমাদের কাছে সেই সুযোগ নিয়ে আসে। আমরা এই সময়টাতে গরু, ছাগল ইত্যাদি পশুর সাথে সময়টাকে ভাগ করে নিই।"
জবি শিক্ষার্থী মোঃ ইব্রাহিম বলেন, "ঈদের খুশি সকালের সাথে ভাগ করে নিতে চাই। বিশেষ করে পরিবারের সাথে খুশি মনে ঈদ কাটাতে চাই। ঈদ সবার জীবনে খুশি বয়ে আনুক।"
সবশেষে আমি বলতে চাই, সময় বদলালেও ঈদের মূল আনন্দের জায়গাটা এখনো অটুট—পরিবার, বন্ধু ও প্রিয়জনের সঙ্গে ভালোবাসা ভাগাভাগির আনন্দ। তরুণরা হয়তো উদযাপনের মাধ্যম পাল্টাচ্ছে, কিন্তু তাদের হৃদয়ের গভীরে ঈদের আনন্দ আজও একইভাবে ধরা দেয়। তাই ঈদের এই আনন্দ শুধু পোশাক আর ফেসবুক পোস্টেই সীমাবদ্ধ না থেকে হোক মানুষের পাশে দাঁড়ানোর, একে অপরকে ভালোবাসার ও সমাজকে আপন করে নেওয়ার উৎসব। ধনী থেকে গরীব সবার ঈদ কাটুক ভালোভাবে এই প্রত্যাশা রেখে আজ বিদায় নিচ্ছি। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা, ঈদ মোবারক!
একুশে সংবাদ/ এ.জে