লাল বলের ক্রিকেটের থেকে সাদা বলের ক্রিকেটে ব্যাটারেরা বেশি সুবিধা পান। বিভিন্ন দেশের টি-টোয়েন্টি লিগে ব্যাটারদের মাঠ ছোট করে দেওয়া হয়। আইপিএলে আবার রয়েছে ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটারের নিয়ম। অনেকের মতে যা অলরাউন্ডারদের জন্য ক্ষতিকর। এমন অবস্থায় অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ড চাইছে বিগ ব্যাশ লিগে নতুন নিয়ম আনতে। কিছু ক্রিকেটারেরা প্রস্তাবও দিয়েছেন নিজেদের মতো। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আসলে কোন ধরনের নিয়ম প্রয়োজন? কী বলছেন বাংলার ক্রিকেটারেরা?
অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি লিগে কী ধরনের নিয়ম আনা যায় তা নিয়ে বোর্ডকর্তাদের আলোচনাও হয়েছে বলে শোনা গিয়েছে। এর মাঝেই পুরুষ এবং মহিলা ক্রিকেটারদের কাছে কোন কোন নতুন নিয়ম আনা যায় তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন রকমের প্রস্তাব দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারেরা।
অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের বার্ষিক অনুষ্ঠান হয়েছিল মেলবোর্নে। সেখানেই বিভিন্ন ক্রিকেটারের কাছে উপদেশ চাওয়া হয়েছিল। কেউ বলেছেন ওয়াইড বলের পর ফ্রি হিট দেওয়া উচিত, কেউ বলেছেন ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলে ব্যাটারদের আউট দেওয়া যাবে না। কারও মতে, মাঠের আয়তন আরও বড় করে দেওয়া উচিত।
সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে ক্রিকেট এখন শুধুই ব্যাটারদের খেলা। দর্শকেরা মাঠে আসেন চার-ছয় দেখার জন্য। যে কারণে নিয়মগুলিও তেমন হয়ে গিয়েছে। বাংলার রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক ভারতীয় দলের নির্বাচকও ছিলেন। সম্বরণ বললেন, “ক্রিকেট ব্যাটারদের খেলা। এর পরেও যদি ব্যাটারদের সুবিধা করে কোনও নিয়ম আনা হয়, তা হলে কেউ বল করতে চাইবে না। নিয়ম যদি পরিবর্তন হয়, তা হলে এমন নিয়ম আনা উচিত যা বোলারদের সাহায্য করবে।”
একমত সৌরাশিস লাহিড়ীও। তিনি মনে করেন, যে নিয়মই করা হোক তাতে ব্যাটার এবং বোলারেরা যেন সমান সুবিধা পান। ১০০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন সৌরাশিস। বাংলাকে বহু ম্যাচ জিতিয়েছেন। বাংলার হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ২২টি। ঘরোয়া ক্রিকেটে ১৬ বছরের কেরিয়ারে ৩৪৯টি উইকেট রয়েছে তাঁর। সৌরাশিসের মতে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এখন ব্যাটারেরা অনেক বেশি সুবিধা পান। সেটার দিকে নজর দেওয়া উচিত। সৌরাশিস বলেন, “ক্রিকেটকে আকর্ষণীয় করা মানে কিন্তু ব্যাটারদের বাড়তি সুবিধা করে দেওয়া নয়। এমন নিয়ম আনা উচিত, যাতে ব্যাটার এবং বোলার সকলেই সমান ভাবে লড়তে পারে। টেস্ট ক্রিকেটে যেমন সমানে সমানে লড়াই হয়, সাদা বলের ক্রিকেটে ততটা হয় না। অনেক নিয়মই রয়েছে যেগুলো ব্যাটারদের সুবিধা করে দেয়। সেই দিকে আরও নজর দেওয়া উচিত।”
অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারেরা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রকমের নিয়ম পরিবর্তনের কথা বলেছেন। তরুণ ওপেনার জেক ফ্রেজ়ার-ম্যাকগার্ক বিগ ব্যাশ লিগে খেলেন মেলবোর্ন রেনেগেডসের হয়ে। তিনি চান ওয়াইড বলের পরে ফ্রি হিট দেওয়া হোক। মহিলা অলরাউন্ডার অ্যানাবেল সাদারল্যান্ড চান প্রথম বলে ব্যাটারদের আউট দেওয়া যাবে না। তাঁকে সমর্থন করেন অলরাউন্ডার তাহিলা ম্যাকগ্রা। ব্যাটার ফিবি লিচফিল্ড এক ধাপ এগিয়ে ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলটি সব ব্যাটারকে ফ্রি হিট দেওয়ার পক্ষে। অলরাউন্ডার অ্যাশলে গার্ডনার চান বাউন্ডারি আরও বড় করে দেওয়া হোক। ম্যাথু শর্ট চান ওভারের মাঝে তৈরি হওয়ার জন্য বোলারদের একটু বেশি সময় দেওয়া হোক।
সম্বরণ এবং সৌরাশিসও কিছু নিয়ম পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৭৫টি ম্যাচ খেলেছেন সম্বরণ। বাংলাকে রঞ্জি জেতানো অধিনায়ক বললেন, “আমার মনে হয় ফ্রি হিট বন্ধ করে দেওয়া উচিত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। আর যদি ফ্রি হিট থাকেও, তা হলে তাতে বোল্ড এবং কট বিহাইন্ড হলে আউট দেওয়া উচিত।”
সৌরাশিস চান ব্যাটার এবং বোলারদের সমান সুবিধা করে দিতে। তিনি বললেন, “বাউন্ডারি অবশ্যই বড় করা উচিত। সেই সঙ্গে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ওভারে দু’টি বাউন্সার করার অনুমতি দিতে হবে। আর পাওয়ার প্লে ছ’ওভারের পরিবর্তে চার ওভারের করতে হবে।”
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :