মো. আব্বাস আলী তালুকদার উজিরপুর উপজেলার অন্যতম এক ক্রীড়া সংগঠকের নাম। বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী হস্তিশুন্ড গ্রামের সম্ভ্রান্ত তালুকদার পরিবারে যার জন্ম। তার বাবা প্রয়াত আব্দুর রব তালুকদার। ১৯৭২ সালে জন্মগ্রহণকারী এই গুণী ব্যক্তিটি খেলাধুলার সাথেই জীবনের সবটুকু সময় পার করেছেন এবং ২০২৪ সাল পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন। খেলাধুলার প্রতি এতই ঝোঁক কোনো ধরনের সরকারি বা বেসরকারি চাকরিতে তিনি যাননি।
হস্তিুশুন্ড গ্রামের সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা থেকে মাধ্যমিক সমমান পাসের পর শিকারপুর সরকারি শেরে বাংলা কলেজে এইচএসসি অধ্যয়ন করেন। সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ, রাজশাহী এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নিয়মিত খেলোয়াড় ছিলেন। ফুটবল, ক্রিকেট, খোকো ছাড়াও তিনি ছিলেন উজিরপুরের একজন পরিচিত অ্যাটলেটিকস।
শৈশব থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায় ভীষণ মনোযোগী ছিলেন। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে পড়াশোনা করেছেন সরকারি শেরে বাংলা কলেজ শিকারপুরে। এখানেও তিনি খেলাধুলায় ভীষণ পারদর্শিতার পরিচয় বহন করেছেন। জেলা-বিভাগ পেরিয়ে কলেজ প্রতিযোগিতা ও কলেজের মান সম্মান বৃদ্ধিতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। ফুটবল-ক্রিকেটের পাশাপাশি অ্যাটলেটিক্স ছিল তার মেইন খেলা। সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ রাজশাহী এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পড়া অবস্থায় তিনি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত একজন খেলোয়াড়। নিজের বিভাগ এবং ইন্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ইভেন্টে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন।
লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে ১৯৯৬ সালে শুরু করেন জাতীয় পর্যায়ে ক্রীড়া পরিচালনার দায়িত্ব। ১৯৯৬ তে ফুটবল এবং ১৯৯৭ সালে ক্রিকেট দুটোতেই সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হওয়ায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড তাকে ফুটবল এবং ক্রিকেট খেলা পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত করেন। এবং সেখানেও তিনি সুনামের সাথে খেলা পরিচালনা করেন। অতঃপর সময়-সুযোগে তিনি বাংলাদেশের আরো বেশ কয়েকটি ফেডারেশনের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করে সাফল্য অর্জন করেন। তার ভিতরে উল্লেখযোগ্য যে সমস্ত ফেডারেশনের সাথে কাজ করেছেন তা হলো- বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশন, বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশন, বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন, বাংলাদেশ খো খো ফেডারেশন, বাংলাদেশ টার্গেট বল ফেডারেশন, বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ সাইকেলিং ফেডারেশনসহ অনেক ফেডারেশনেই তিনি পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এখনো করছেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ জাতীয় মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্সের একজন নিয়মিত সদস্য। এখানেও তিনি নিজ জেলা ও বরিশাল বিভাগ এবং বাংলাদেশ আনসার ও বাংলাদেশের হয়ে অনেক পদক অর্জন করেছেন।
২০০১ সালে জার্মানির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় (লাইভজিক) বিশ্ববিদ্যালয় হ্যান্ডবলের কোসেস ট্রেনিং উচ্চতর কোর্সে স্কলারশিপ পেয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য কমন করেন। কোর্স শেষে তিনি জার্মান ভাষা শিক্ষকের কোর্স কমপ্লিট করে সেখানে পুনরায় ফ্রাঙ্কফুট বিশ্ববিদ্যালয়ে স্পোর্টসের উপরে মাস্টার্স ডিগ্রি ও এম ফিল ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। উল্লেখ্য, মাসেলস-এর পাওয়ার ডেভেলপমেন্টের উপরে তিনি পিএইচডি অধ্যয়নরত ছিলেন। পারিবারিক কারণে তার হঠাৎ দেশে আসার কারণে তার ডক্টরেট ডিগ্রিটা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নিয়মিত রেফারি ছিলেন তার বরাত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় তিনি জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের কাছে রেফারি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং বেশ সুনামের সাথে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত জার্মানিসহ ইউরোপের অনেক দেশেই তিনি ফুটবল খেলা পরিচালনা করেন।
২০২৩ সালের নভেম্বর ৫ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত ভারতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক দ্বিপাক্ষিক টার্গেট বল সিরিজের বিশেষজ্ঞ রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আব্বাস আলী তালুকদার। ২০২৪ সালের জুলাই ৮ থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত প্রথম সাউথ এশিয়ান টার্গেট বল চ্যাম্পিয়নশিপে বিশেষজ্ঞ রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন উজিরপুরের একমাত্র গুণী ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব আব্বাস আলী তালুকদার।
(উল্লেখ্য, প্রথম সাউথ এশিয়ান টার্গেট বল চ্যাম্পিয়নশিপে পুরুষ এবং মহিলা দুটি বিভাগেই বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে)।
আব্বাস আলী তালুকদার উজিরপুর উপজেলার একজন স্বনামধন্য সমাজসেবক। উপজেলায় নিজের চেষ্টায় অনেকগুলো চক্ষুশিবির করে এলাকার দরিদ্র লোকদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। বিনামূল্যে চশমা ও অপারেশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। হস্তিশুন্ড-কাজিরা নবীন সংঘ (রেজিস্ট্রার্ড) নামে ক্লাবের মাধ্যমে এলাকার দরিদ্র মানুষদের সেবা ও তরুণদের খেলাধুলায় নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন।
একুশে সংবাদ/ এসএডি
আপনার মতামত লিখুন :