AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

দেশে চাকরিখাতে ভিনদেশিদের দাপট


Ekushey Sangbad
হাসান কাজল
০৮:০০ পিএম, ২৮ মে, ২০২৪
দেশে চাকরিখাতে ভিনদেশিদের দাপট

  • বাংলাদেশে চাকরি করে অনিয়মের মাধ্যমে বছরে ২৬ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে বিদেশিরা
  • ১০ লাখের বেশি অবৈধ বিদেশি শ্রমিক বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে কাজ করছে
  • বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে ভারতীয়দের দাপট
  • দেশি নাগরিকদের চেয়ে বিদেশিরা বেশি সুবিধা পাচ্ছে

দেশে কর্মরত বৈধ-অবৈধ বিদেশির সংখ্যা কত? এই প্রশ্নের সঠিক পরিসংখ্যান কারো কাছে নেই। এর আগে বিভিন্ন সময়ে টিআইবি, বিশ্বব্যাংকসহ দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে উঠে এসেছে নানারকম তথ্য। এবিষয়ে গতকাল বুধবার দেশে কর্মরত বিদেশিদের হিসাব চেয়ে আইজিপিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এ বিষয়ে প্রতিবেদন আকারে তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া যারা অবৈধভাবে কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারা কেন অবৈধ নয় এ মর্মে রুলও জারি করেছেন আদালত।

গতকাল বুধবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এর আগে বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রে কতজন বৈধ ও অবৈধ শ্রমিক কাজ করছেন তার তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন এক আইনজীবী।

টিআইবির এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়, বিদেশিরা বাংলাদেশে চাকরি করে অনিয়মের মাধ্যমে বছরে ২৬ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বিষয়টি ব্যাপক আলোচনায় উঠে আসে।

এবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, 

দেশে ১০ লাখের বেশি অবৈধ বিদেশি শ্রমিক বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে কাজ করছে। এর ফলে এ দেশের নাগরিকরা যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ‘অবৈধ বিদেশি খেদাও আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠন এ তথ্য দেন। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই রিটটি দায়ের করা হয়।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ১১ কোটি ৪০ লাখ ডলার সমপরিমাণ টাকা ভারতে পাঠাচ্ছে এ দেশে কর্মরত ভারতীয়রা। সে হিসাবে ভারতের ২৫তম প্রবাসী আয়ের বৃহৎ উৎস বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়সে ভেলের এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়, ‘বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে ভারতীয়দের দাপট’ এতে বলা হয় বাংলাদেশে প্রায় ৫ লাখ ভারতীয় বিভিন্ন খাতে চাকরি করছেন। এদের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশের ওয়ার্ক পারমিট রয়েছে। বেশিরভাগই আসেন ট্যুরিস্ট ভিসায়। অর্থাৎ সাড়ে ৪ লাখ ভারতীয় বাংলাদেশে অবৈধভাবে কাজ করছেন। এদের বেতন ডলারে ভারতেই পাঠিয়ে দেয়া হয়। সফটওয়্যার ও ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের কারণে বাংলাদেশের আইটি সেক্টরে ভারতীয়দের দাপট বেশি। ট্রাভেল এজেন্টদের বড় একটি অংশ ভারতীয়দের নিয়ন্ত্রণে। পোশাক খাতের টেকনিশিয়ান ও ডিজাইনার কাজে ভারতীয় বেশি। এমনকি সংবাদমাধ্যম, বিজ্ঞাপন, কনসালটেন্সি, একাউন্টেন্ট, প্রশাসনিক খাতেও ভারতীয়রা রয়েছেন। ভারতের পরেই শ্রীলঙ্কা, চীন ও থাইল্যান্ডের অবস্থান।

৭ ফেব্রুয়ারি ডয়সে ভেলে’র প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়,

নানা কারণে বাংলাদেশের পোশাক খাতে ভারতীয়দের অবস্থান শক্ত। করোনাভাইরাসের কারণে চীনাদের দাপট কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় ভারতীয়দের দাপট বাংলাদেশে আরো বাড়তে পারে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

এদিকে আমাদের দেশে দক্ষ লোক না থাকার কারণে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করছে বিদেশিরা। যাদের মাধ্যমেও দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের সঠিক সংখ্যা নেই সরকারের কাছেও। টিআইবির তথ্যমতে, আড়াই থেকে ৩ লাখ বিদেশি বাংলাদেশে কর্মরত। এদের মধ্যে মাত্র ৯০ হাজার বৈধ। বাকিরা অবৈধ উপায়ে কাজ করে যাচ্ছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসেবে এ সংখ্যা ৮৬ হাজার, যাদের বেশিরভাগ ভারতীয়। অপরদিকে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) হিসেবে এ সংখ্যা মাত্র ১০ হাজারের কিছু বেশি। তথ্যে এ বিশাল ফারাকের সঠিক কোনো তথ্য না পাওয়া গেলেও এ সংখ্যা ২ লাখের কম হবে না বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব আমলে নিলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরিসংখ্যানের সঙ্গে তথ্য মিলে না। এনবিআরের তথ্যমতে, 

২০২০-২১ অর্থবছরে মাত্র ১৪ হাজার বিদেশি কর দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে থাকা জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) হিসাবে প্রতিবছর প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার অর্থ দেশের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিরা। ২০১৫ সালের সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) তথ্যমতে, বাংলাদেশ ছিল ভারতের প্রবাসী আয়ের তৃতীয় উৎস। টিআইবির তথ্যমতে, প্রতিবছর ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি অবৈধভাবে দেশের বাইরে পাঠাচ্ছেন বিদেশিরা। বাংলাদেশে এনজিও, আইটি এবং গার্মেন্টসহ প্রায় ৩২টি ক্ষেত্রে চাকরি করছেন বিদেশিরা।

ঢাকার অদূরে গাজীপুরের নামকরা একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন একজন ভারতীয় নাগরিক। পোশাক কারখানার মানবসম্পদ মহাব্যবস্থাপক হিসেবে প্রায় ১০ বছর ধরে কাজ করছেন সে। তার প্রাপ্ত বেতন-ভাতাও খুবই উচ্চমানের। অফিসিয়াল হিসাবে তার বেতন সাড়ে ৩ লাখ টাকারও বেশি। কাগজ-কলমের বাইরে আরও ভাতা পেয়ে থাকেন বলে জানান একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন কর্মকর্তা।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে আরও চারজন ভারতীয় কাজ করছেন বলে জানা গেছে। এরা সবাই খুবই উচ্চ বেতনে চাকরি করছেন, পাশাপাশি পাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের আরও নানা সুযোগ-সুবিধা। একই পর্যায়ে কাজ করে বাংলাদেশি কর্মকর্তারা বিদেশিদের চেয়ে বেতনসহ সুযোগ-সুবিধা অনেক কম পেয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ আছে।

গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকার সাভার, আশুলিয়া জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এমন অসংখ্য কোম্পানিতে কাজ করছেন ভারতীয়, শ্রীলঙ্কান, পাকিস্তানিসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা। এরা সবাই বাংলাদেশিদের চেয়ে তুলনামূলক অনেক বেশি বেতনে কাজ করছেন। এসব বেতন-ভাতার প্রায় সবটাই বিদেশে চলে যাচ্ছে বলে জানা যায়। বিদেশি কর্মীদের থাকা-খাওয়া খরচও কোম্পানি বহন করে। ছুটিতে নিজের দেশে গেলে সেখান থেকেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আসে তারা। এতে করে, দেশের আয় চলে যাচ্ছে বিদেশে এবং পাশাপাশি ক্ষোভ বাড়ছে দেশি কর্মকর্তাদের মধ্যে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের তথ্যমতে, 

প্রতিবছর ২২ লাখের মতো জনশক্তি চাকুরির বাজারে ঢুকছে যাদের বেশিরভাগই বেকার রয়ে যাচ্ছে। বিআইডিএসের তথ্যমতে, দেশের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের ৩৩ শতাংশ বেকার থাকছে প্রতিবছর। করোনার কারণে এ অবস্থা আরও ভয়াবহ বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।

পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের দেশে ইন্ডিয়ান এবং শ্রীলঙ্কানদের চাহিদা প্রচুর। বিভিন্ন কারণে এ চাহিদা তৈরি হয়েছে। সেটা হতে পারে পেশাগত দক্ষতা, কর্মক্ষমতা এবং অভিজ্ঞতার কারণে। তারা আমাদের দেশীয় কর্মকর্তাদের তুলনায় বেশি বেতন-ভাতা পায় এটা সত্যি। তারা কাজ ভালো করে বলেই তাদের বেতন বেশি দিয়ে আমরা নিয়োগ করি।’

কতজন বিদেশি কাজ করে জানতে চাইলে তিনি বলেন,  

এ সংখ্যা গার্মেন্ট সেক্টরে কমবেশি ১৫-২০ হাজার হবে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শ্রীলঙ্কান এবং ইন্ডিয়ান। কিছু পাকিস্তানি রয়েছে। এর পাশাপাশি চাইনিজ, তার্কিশ, জাপানিজ রয়েছেন।’ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) তথ্য মতে, বিভিন্ন এনজিওতে কর্মরত বিদেশি নাগরিকরা প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ২৬ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছেন।

অন্য আরেকটি গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে কমপক্ষে ৫ লাখ বিদেশি কর্মরত রয়েছেন। এ পরিমাণ জনশক্তি প্রতিবছর ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ নিয়ে যাচ্ছেন দেশে। যার থেকে খুব অল্প পরিমাণ রাজস্ব পাচ্ছে সরকার। অথচ এসব বিদেশির আয়ের ৩০ শতাংশ কর নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার।

টিআইবি তাদের গবেষণায় দেখিয়েছে, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি নাগরিকরা তাদের প্রকৃত বেতন-ভাতা গোপন করছেন। এ ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা করছে নিয়োগকারী সংস্থা। এ কারণে এনজিওতে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের সত্যিকারের বেতনের চিত্র উঠে আসে না। ফলে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের  মধ্যে সবেচেয়ে বেশি হচ্ছে ভারতের। এরপরই রয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা। এদের কেউ ভ্রমণ ভিসায়, কেউ ব্যবসায়িক ভিসায়, কেউবা ‘অন অ্যারাইভাল’ ভিসায় এ দেশে এসে অবৈধভাবে রয়ে গেছেন। ১০৮টি দেশের নাগরিক অবৈধভাবে অবস্থান করছেন এদেশে। অনেকে চাকরি করছেন, হুন্ডির মাধ্যমে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। সরকারি হিসাবে এখন বৈধভাবে ১৪০টি দেশের ২০ হাজার ১৯৭ জন নাগরিক রয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০ হাজার ৯৭৪ জন হলেন ভারতের নাগরিক। এরপরই চীনের ২ হাজার ৯৩ জন।

বিভিন্ন এনজিওর আবাসিক পরিচালক ও নির্বাহী পরিচালকদের কাছে পাঠানো চিঠিতে এনজিও ব্যুরো বলেছে, 

ব্যাংকের মাধ্যমে বেতন-ভাতা গ্রহণ, বেতন বিবরণী নিয়মিত এনজিও ব্যুরোতে জমা দেওয়া ও আয়কর পরিশোধ ছাড়া কোনো বিদেশি এনজিওকর্মীর নিয়োগের মেয়াদ বাড়ানো যাবে না।

অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রামরুর মতে, এ দেশে বৈধভাবে যারা কাজ করছেন, তারাও সঠিক ভিসায় অবস্থান করছেন কিনা, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে দেশ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতেই থাকবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, সে দেশে রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়) পাঠানো দেশগুলোর প্রথম পাঁচটির মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। সে অনুযায়ী বৈধ ও অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয়দের সংখ্যার সামঞ্জস্য আছে কি না এবং তারা যে কর দিচ্ছেন, সেটা ঠিক আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে দেশে ২০২০ সালে প্রায় ১১ লাখ বিদেশি অনুমতি সাপেক্ষে কাজ করেছেন। কিন্তু বিজনেস ভিসা বা এক বছর করে ই-ভিসা নিয়ে বিডার রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কাজ করছেন এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি । এটা বোঝা যায় ভারতের রেমিট্যান্স প্রদানকারী দেশে চতুর্থ স্থানে বাংলাদেশের নাম দেখে।

বাংলাদেশের আইটি খাতের একজন উদ্যোক্তা জানান, 

সফটওয়্যার ও ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে ভারতীয় কৌশল ব্যবহারের কারণে ওই দেশের জনশক্তিকেও (ভারতীয়) কাজ দিতে হয়। শুধু তাই নয় অনেক ক্ষেত্রে তাদের লোক রাখার শর্তজুড়ে দেয়া হয়। আবার ট্রাভেল এজেন্টদের বড় একটি অংশ ভারতীয়দের নিয়ন্ত্রণে। তাই তাদের সফটওয়্যার ও তাদের লোক বলে কাজ হয়। এটা সরকারের পলিসির বিষয়। সরকার পলিসি ঠিক করলে তাদের দাপট কমবে।

বাংলাদেশের চাকরির বাজার নিয়ে কাজ করা সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হলো বিডিজবস ডটকম বলেন, কর্মরত বিদেশিদের মধ্যে ভারতীয়রাই শীর্ষে। তারপরে শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড। এদের মধ্যে শতকরা ১০ ভাগেরও ওয়ার্ক পারমিট নেই। অধিকাংশই অবৈধভাবে কাজ করেন। তাদের পেমেন্টও এখানে করা হয়না। ভারতীয় হলে তার পেমেন্ট ভারতেই দেয়া হয়। যারা নিয়োগ করেন তারা এরকম একটা সিস্টেম গড়ে তুলেছেন।

বাংলাদেশ থেকে কত রেমিট্যান্স দেশের বাইরে যায় সেই হিসাবটি দেখলে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের সংখ্যা সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। আর বাংলাদেশ থেকে ভারতেই বেশি রেমিট্যান্স যায়। পোশাক খাতের আয়েরও বড় একটি অংশ ভারতীয় টেকনিশিয়ান ও ডিজাইনাররা নিয়ে যান।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গত ৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে বাংলাদেশে মোট দুই লাখ ৫০ হাজার বিদেশি বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত। তাদের মধ্যে বৈধ ৯০ হাজার। অর্থাৎ কাজের অনুমতি নিয়ে এসে কাজ করছেন ৯০ হাজার। বাকিরা অবৈধভাবে বাংলাদেশে আছেন। আর যারা বৈধভাবে আছেন তাদের মধ্যে ৫০ ভাগ কোনো অনুমতি না নিয়েই টুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসে কাজ করছেন। এই বিদেশিরা বছরে ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার করেন। টিআইবি বাংলাদেশে বিদেশিদের হিসাব করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ২০১৮ সালে দেয়া ৮৫ হাজার ৪৮৬ জন বৈধ বিদেশির তথ্যের ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু বাস্তবে এই সংখ্যা বহুগুণ বেশি।

ডয়সে ভেলের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, 

বাংলাদেশে দু’টি তৈরি পোশাক কারখানার মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে নানা কারণে পোশাক খাতে ভারতীয়দের অবস্থান শক্ত। এর মধ্যে পোশাক খাতে জিজাইনসহ আরো কয়েকটি বিষয়ে দক্ষ জনশক্তির অভাব আছে। আর পোশাকের বায়িং হাউজগুলো নিয়ন্ত্রণ করে ভারতীয়রা। ফলে পোশাক কারাখানাগুলো বায়ার পেতে তাদের কারখানায় মার্কেটিং এবং হিসাব বিভাগেও ভারতীয়দের নিয়োগ করে। তাদের মতে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে এক লাখেরও বেশি ভারতীয় কাজ করেন। অন্যদিকে বায়িং হাউজে এই সংখ্যা আরো আরো বেশি।

এর বাইরে আইটি খাতেও ভারতীয়দের দাপট। আরো অনেক সেবা খাত আছে যেখানে ভারতীয়রা কাজ করেন। এমনকি বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম, বিজ্ঞাপন, কনসালটেন্সি এসব খাতেও ভারতীয়রা রয়েছেন। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে কম করে হলেও পাঁচ লাখ ভারতীয় কাজ করে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু তাদের অধিকাংশেরই কোনো ওয়ার্ক পারমিট নেই। তারা ট্যুরিস্ট ভিসায় আসেন। আর তাদের বেতন অনেক বেশি। ট্যুরিস্ট ভিসায় যারা কাজ করেন তাদের রোজগারের পুরো অর্থই অবৈধ পথে বাংলাদেশের বাইরে চলে যায়।

বিআইডিএসের অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদের মতে, প্রতিবছর আমাদের দেশ থেকে চার-পাঁচ বিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। আর এবার আমাদের রেমিট্যান্সের টার্গেট ২০ বিলিয়ন ডলার। তাহলে আমরা যা আনতে পারি তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ আবার বিদেশি কর্মীদের দিয়ে দিতে হয়। এ থেকে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। এটা আমি বলছি বৈধ চ্যানেলের কথা। অবৈধভাবে কত যায় সেটা সরকার উদ্যোগ নিলে জানতে পারে। কিন্তু উদ্যোগ নেই। এই অর্থ সবচেয়ে বেশি যায় ভারত ও শ্রীলঙ্কায়। আমার কাছে অবাক লাগে এখানে একাউন্টেন্ট, প্রশাসনিক কাজেও বাইরে থেকে লোক আনা হয়।

উইকিপিডিয়াতে গিয়ে ‘ইন্ডিয়ানস ইন বাংলাদেশ’ লিখে সার্চ দিলে একটি তথ্য পাবেন যেখানে বাংলাদেশ থেকে তারা কত রেমিটেন্স নিয়ে যাচ্ছে তার হিসাবও পাবেন। যদিও তারা একটি পত্রিকাকে কোট করেছে, ‘২০১৭ সাল থেকে ইন্ডিয়ানরা ১০ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে রেমিটেন্স হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে’ এবং ইন্ডিয়া যে সমস্ত দেশ থেকে রেমিটেন্স ইনকাম করে তাদের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪র্থ। সেখানে তারা বলেছেন যে, বংলাদেশ সারা দুনিয়া থেকে ১৮.৫০ বিলিয়ন ডলারের মতো রেমিটেন্স ইনকাম করে। যদিও টার্গেট ছিলো ২৬ বিলিয়ন ডলারের মতো। তার মানে আমরা সারা দুনিয়া থেকে যতটুকু ইনকাম করি তার অর্ধেকেরও বেশি এক ইন্ডিয়া আমাদের কাছ থেকে রেমিটেন্স হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমাদের এখানে ওয়ার্ক পার্মিটের মতো কোনো নিয়মকানুন নেই। এরকম একটি অবস্থায় আমরা ছিলাম। ২০২০ সালে বিভিন্ন মিডিয়া বা গবেষণায় এগুলো প্রকাশ পেয়েছে।


একুশে সংবাদ/হ.ক.প্র/জাহা

Link copied!